জকিগঞ্জ উপজেলার ৯নং মানিকপুর ইউনিয়নে সুরমা নদীর ভাঙ্গনে হুমকির মুখে পড়ছে সুরানন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯০৫ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হলেও সুরমা নদীর ক্রমগত ভাঙ্গনের ফলে এ পর্যন্ত দু’বার নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। প্রতিবছর একের পর এক নদী ভাঙ্গনে এ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের প্রায় দুই একর জায়গা নদী গর্ভে চলে গেছে। তবুও শেষ রক্ষা হচ্ছেনা সুরানন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। সুরমা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন সৃষ্টি হওয়ায় যে কোন সময় বিদ্যালয়টি ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানান, পরপর দু’বার ভাঙ্গনের পর নতুন করে বিদ্যালয়টি ২০০৮ সালে ৩৯ শতক জায়গায় নির্মাণ করা হলেও ফের ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। নতুন করে বিদ্যালয়ের ১৯ শতক জায়গা নদী গর্ভে চলে গেছে। চলতি বছরে আরও ১৫ ফুট জায়গা ভেঙ্গে নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। আর মাত্র ৩০/৩৫ ফুট ভেঙ্গে গেলে বর্তমান বিদ্যালয় ভবনটিও নদী গর্ভে চলে যাবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পাঁশেই বয়ে গেছে সুরমা নদী। সুরমা নদীর পাড়ে বিদ্যালয়টি হওয়ায় প্রতি বছর বন্যা ও বৃষ্টির কারণে নদীর ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যে বিদ্যালয়টির প্রায় অর্ধ শতাংশ জায়গা ভেঙ্গে নদীতে চলে গেছে। নদী ভেঙ্গে বর্তমানে ভাঙ্গন বিদ্যালয় ভবনের কাছাকাছি চলে এসেছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে এই প্রতিষ্ঠানটির দু’তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট একতলা ভবন। দীর্ঘদিন যাবৎ নদী ভাঙন থেকে বিদ্যালয়টি বাঁচাতে নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি থাকলেও এখনো তা পূরণ হয়নি এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। ফলে প্রতি বছর বন্যার সময় নতুন নতুন ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। এভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে যে কোন সময় বিদ্যালয় ভবন ভেঙ্গে নদী গর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
এ বিষয়ে সুরানন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ফখরুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়টি ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সালে বিদ্যালয়টি নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেলে নদী থেকে অনেক দূর বিদ্যালয় পূনরায় নির্মাণ করা হয়। সময়ের ব্যবধানে ক্রমাগত নদী ভাঙ্গনের ফলে সেখান থেকেও বিদ্যালয় সরাতে হয়। ২০০৮ সালে ৩৯ শতক জায়গায় বিদ্যালয়ের বর্তমান বিল্ডিং নির্মাণ করা হলেও নদী ভাঙ্গনে হুমকির মূখে পড়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৯ শতক জায়গা নতুন করে ভেঙ্গে নদী গর্ভে চলে গেছে।
তিনি বলেন, এক সময় বিদ্যালয়টিতে শতাধিক শিক্ষার্থী লেখা পড়া করলেও নদী ভাঙ্গনের কারনে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের সন্তানদের বেশীর ভাগ অন্যত্র নিয়ে লেখাপড়া করাচ্ছেন। সে কারনে বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী আছে মাত্র ৬২ জন। বিদ্যালয়ের আসা যাওয়ার যে রাস্তা রয়েছে তাও এখন নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। এতে শিক্ষর্থী সংকট দেখা দিয়েছে শতবর্ষী এ বিদ্যালয়ে।
৯৩নং সুরানন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূমি দাতা মৃত তজম্মুল আলী’র ছেলে বুরহান উদ্দিন জানান, তার বাবার দানকৃত জায়গার ওপর বিদ্যালয় নির্মিত হয়েছিল। নদী ভাঙ্গনে পরপর বিদ্যালয়টি দু’বার বিলীন হওয়ায় সর্বশেষ বর্তমান স্থানে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হয়। বিদ্যালয়ের বর্তমান ৩৯ শতক জায়গার মধ্যে ১৯ শতক জায়গা চলে গেছে সুরমা নদীতে। তাই দ্রুত নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ দেয়া না হলে বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভূমি দাতা সাবেক ইউপি সদস্য মাসুক আহমদের ছেলে মিসবাহুল ইসলাম সুহেল জানান, ক্রমাগত নদী ভাঙ্গনের ফলে বিদ্যালয়ের জায়গা নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লক নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে আমার বাবা বিদ্যালয়ে ৩ শতক জায়গা দান করে ওয়াশ ব্লক নির্মাণের সুযোগ করে দেন।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিদ্যালয়টি সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি বার বার জানানো হলেও এই দাবি এখনো পূরণ হয়নি। এতে বিদ্যালয় ভবন নদীগর্ভে চলে যাওয়ার উপক্রম। তার দাবি এই বিদ্যালয় বাঁচাতে নদীর পাশে দ্রুত প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হোক।
এদিকে সুরমা নদীর ভাঙ্গনে বিদ্যালয়ের জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার খবর শোনে তাৎক্ষণিক সরেজমিন পরিদর্শন করেন জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফসানা তাসলিম মিতু, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ এমদাদুল হক, সমাজসেবা কর্মকর্তা বিনয় ভূষণ দাস, প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ও সমবায় কর্মকর্তা মোঃ ফখরুদ্দিনসহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।
এ সময় ইউএনও আফসানা তাসলিম মিতু বলেন, আমি নিজে বিদ্যালয়ের পাঁশের ভাঙ্গন দেখে গেলাম। শীঘ্রই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply