বিগত কয়েক বছর ধরে সংস্কার করা হয়নি জকিগঞ্জ-শেওলা জিরো পয়েন্ট সড়ক। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খানাখন্দে ভরে গেছে এটি। সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও কিছু কিছু যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলছে। জকিগঞ্জ কাস্টমসে আসা পণ্যবাহী বড় বড় ট্রাকগুলো সড়কটি ব্যবহারের অনুমতি না থাকলেও বিগত দিনে প্রতিনিয়ত চলাচলের কারণে সড়কে ভয়ংকর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, অল্প সময়ে জকিগঞ্জ-শেওলা সড়ক দিয়ে সিলেট যাতায়াত করা সম্ভব হওয়ায় প্রায় পুরো উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করে যাতায়াত করেন। তবে জকিগঞ্জ পৌরসভা ও খলাছড়া ইউনিয়নের একটি অংশ সহ পুরো বীরশ্রী ইউনিয়নের মানুষ এ সড়ক ব্যবহার করা ছাড়া বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে সড়কটি ভেঙ্গে যাওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন জকিগঞ্জ পৌরসভা, খলাছড়া ও বীরশ্রী ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। তাই স্থানীয় এলাকাবাসী দীর্ঘদিন থেকে সড়কটি সংস্কারের দাবী জানিয়ে আসছেন।
জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক সংস্কারের দাবিতে গত ১লা সেপ্টেম্বর স্থানীয় এলাকাবাসী জকিগঞ্জ উপজেলা সদর ও ঈদগাহ বাজারে মানববন্ধন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেছে। তবুও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা বলে অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসীর।
সরেজমিন দেখা গেছে, জকিগঞ্জ-শেওলা সড়কের বিভিন্ন জায়গায় কার্পেটিং উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক গর্তে পানি জমে আছে। গর্তের মধ্যে আটকে যাচ্ছে সিএনজি চালিত অটোরিকশা। অনেক জায়গায় গর্তের কারণে সড়ক সংকুচিত হয়ে গেছে, প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। অনেক জায়গায় রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় পাশাপাশি দু’টি গাড়ি অতিক্রম করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। ভাঙা রাস্তায় ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। চালকদের অভিযোগ, সড়কটি একদিকে আঁকা বাঁকা আর অন্যদিকে খানাখন্দের কারণে রাতের বেলায় মরণফাঁদে পরিণত হয়।
শ্রমিক নেতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, সড়কটি সংস্কারের দাবীতে আমরা মানববন্ধন করে ইউএনও’র নিকট স্মারকলিপি দিয়েও কাজ না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার সিলেটের জেলা প্রশাসক জকিগঞ্জ এসে মতবিনিময় করলে আমি এই সড়ক সংস্কারের দাবী জানাই। আমার দাবীর জবাবে তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বস্থ করেন। কিন্তু আজ এক সপ্তাহ চলে গেলেও কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না।
২নং বীরশ্রী ইউনিয়নের পশ্চিম জামডহর গ্রামের শরীফ মোহাম্মদ হুসেইন চৌধুরী তারেকের ভাষ্য, এ রাস্তা দিয়ে কোন সুস্থ মানুষ আসা-যাওয়া করলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। বেহাল রাস্তাটি কয়েক বছর ধরে সংস্কার হচ্ছে না। এ রাস্তা দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সিলেট যাওয়া আসা যায়। অন্য সড়ক দিয়ে গেলে অনেক ঘুরতে হয়। কিন্তু দিন দিন রাস্তাটি খানাখন্দে ভরে গেলেও সংস্কারের উদ্যোগ নেই বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কার চালক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘সিলেট থেকে যাত্রী নিয়ে আমরা এ সড়ক ব্যবহার করে যাতায়াত করি। এতে সময় অনেক কম লাগে। কিন্তু রাস্তার যে অবস্থা, তাতে যাতায়াত করা খুবই কষ্টকর। গত কয়েকদিন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করায় আমার গাড়ি লক্কর ঝক্কর হয়ে গেছে। তাই দ্রুত সড়কটি সংস্কার করা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অফিস সুত্রে জানা যায়, জকিগঞ্জ-শেওলা সড়ক সংস্কারের জন্য একাধিকবার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে যাওয়া ৪ কিলোমিটার সড়ক দ্রুত সংস্কারের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। অনুমোদন হলে দ্রুত সড়ক মেরামতের কাজ শুরু হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফসানা তাসলিম মিতু বলেন, জকিগঞ্জ-শেওলা সড়কের ২/৩ কিলোমিটার মতো সংস্কারের অনুমোদন পেয়েছি। টেন্ডার হলে কাজ শুরু করবে ঠিকাদার। সড়কের ভাঙ্গনকৃত বাকি জায়গা আপাতত উপজেলার সরকারি বরাদ্ধ থেকে চলাচলের উপযোগী করে মেরামত করা হবে।
Leave a Reply