নিজ দেশের এক ইঞ্চি ভূমি রক্ষায় যেখানে যুদ্ধ করার কথা, ঠিক সেখানে কোন যুদ্ধ কিংবা সংঘাত ছাড়াই প্রতিবছর বাংলাদেশের শতশত একর ভূমি নীরবে নিয়ে যাচ্ছে ভারত। অথচ ভারতে চলে যাওয়া ভূমি কখনো বাংলাদেশ ফেরত নিয়ে আসার কিংবা পুনরুদ্ধার করার সুযোগ দৃশ্যমান নয়। যার ফলে প্রতি বছর ক্রমেই ছোট হচ্ছে বাংলাদেশের মানচিত্র আর বড় হচ্ছে ভারতের মানচিত্র। নিজ দেশের মানচিত্র পাল্টে যাওয়ার মতো ভয়ংকর সংবাদ শোনেও যখন রাষ্ট্র উদাসীন থাকে, তখন জনগণের আফসোস করা ছাড়া আর কিছু থাকেনা। হতাশা আর বোবা কান্না ছাড়া কিছুই করতে পারেনা হতভাগা জনগণ। স্বাধীনতার পর থেকে এ থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নিকট জনগণের তরফ থেকে বারবার বিষয়টি উত্থাপিত হলেও আজ অবধি সরকার তা আমলে নেয়নি। এনিয়ে জনগণের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজমান।
এতক্ষণ বলছি, বাংলাদেশের সিলেট জেলার সবচেয়ে দূরবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জবাসীর কথা। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহক দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ উপজেলা ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে ভারতের পেটে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত নদী কুশিয়ারা’র প্রতিবছরের ভাঙ্গনের ফলে এমন ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে।
সরকারকে বিবেচনায় রাখা দরকার, কুশিয়ারা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। কুশিয়ারা নদীর জকিগঞ্জ উপজেলার যে অংশ রয়েছে, সে অংশের মধ্যবর্তী স্রোত বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানা নির্ধারণ করে। কুশিয়ারা নদীর ৪১ কিলোমিটারই ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত রেখা। যার ফলে প্রতি বছর কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে বাংলাদেশ কত যে ভূমি নীরবে ভারতে চলে যাচ্ছে তার হিসাব কেউ রাখেনা। যে এলাকার বাড়ি-ঘর, গাছপালা, কবরস্থান, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দিরসহ নানা স্থাপনা চলে যায়, একমাত্র তারাই বলতে পারবেন। অপরদিকে ভারত অংশে টেকসই বেড়িবাঁধ থাকায় তাদের এক ইঞ্চি ভূমি বাংলাদেশে আসছেনা। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনগণ বারবার ইউনিয়ন মেম্বার থেকে এমপি-মন্ত্রী, ইউএনও অফিস থেকে সচিবালয় পর্যন্ত, সামাজিক নেতা থেকে রাজনৈতিক নেতা পর্যন্ত আবেদন নিবেদন করে কাজের কাজ কিছু হচ্ছেনা। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে কত অনুরোধ, কত হুমকি কিছুতে দাবী আদায় করা সম্ভব হচ্ছেনা। স্থানীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতারা সভা-সমাবেশ, মানববন্ধনসহ হরেক রকম কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন করেও যেই সেই। একটুও কর্ণপাত করছেনা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। এনিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই সিলেটের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলার লক্ষ লক্ষ মানুষের।
স্থানীয়রা মনে করেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোটি কোটি টাকার শতশত প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজে সরকার কেন এত উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে? সরকার কি দেশের মানচিত্র রক্ষার একটুও প্রয়োজন বোধ করেনা? সরকার কি চায় দেশের মানচিত্র ছোট হোক? দেশটা ভারতে চলে যাক? কুশিয়ারা নদীর মাত্র ৪১ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ দেয়ার কি অর্থ সরকারের নিকট নেই? এমন অসংখ্য প্রশ্ন এখন জনগণের মনে। গণমাধ্যম কর্মীরা সরেজমিন গেলে জনগণের প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে যান।
আমরা মনে করি, সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর ৪১ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ দেয়া প্রয়োজন। নতুবা ধীরে ধীরে এক সময় বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে জকিগঞ্জ নামক অতি পরিচিত ভুখন্ডটি। ভুমিহীন হয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবে এ জনপদের লক্ষাধিক পরিবার। তাই বাংলাদেশের মানচিত্র রক্ষায় সরকারকে আবশ্যই দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে।
Leave a Reply