সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক-কে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করেছে বিজিবি।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শুক্রবার রাতে ‘ভারতে যাওয়ার প্রাক্কালে’ সীমান্তে বিজিবির হাতে তিনি আটক হন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে সোচ্চার এই সাবেক বিচারপতি বিভিন্ন সময়ে তার মন্তব্যের জন্য আলোচিত ছিলেন। গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তার কোনো খোঁজ মিলছিল না। এরইমধ্যে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ‘আপত্তিকর মন্তব্য করার’ অভিযোগে ঢাকা ও নোয়াখালীতে দু’টি মামলা হয়েছে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে আটকের পর বিচারপতি মানিক-কে স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পে রাখা হয়।
১৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসাদুন নবী সাংবাদিকদের বলেন, “অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় দনা সীমান্ত থেকে আমরা আটক করেছি। উনাকে আইনি প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। শিগগিরই সংবাদমাধ্যমকে প্রেসনোট পাঠিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।”
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে শিক্ষকতা করা ও ১৯৭৮ সালে হাই কোর্টের আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন জীবন শুরু করা শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হন। ২০০১ সালে তাকে হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারক করে নেয় সরকার। কিন্তু পরে বিএনপি সরকার এসে তাকে বাদ দেয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর হাই কোর্টের একটি রায়ে বিচারকের আসনে ফেরেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। ২০১৩ সালে তাকে পদোন্নতি দিয়ে আপিল বিভাগের বিচারক করা হয়। ২০১৫ সালে অবসরে যাওয়ার আগে তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে বার বার শিরোনাম হয়েছেন বিচারপতি মানিক। সে সময় তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে অভিযোগও করেছিলেন।
অবসরের পর তাকে নিয়মিত টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে দেখা যেত। বরাবরই তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ‘আপত্তিকর মন্তব্য করার’ অভিযোগে গত কয়েক দিনে বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে যে দু’টি মামলা হয়েছে, তার মধ্যে একটি করেছেন মো. জিয়াউল হক নামের এক আইনজীবী। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম সাইফুল ইসলামের আদালতে দায়ের করা ওই মামলায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকেও আসামি করা হয়েছে।
‘মানহানির’ অভিযোগে বিবাদীদের কাছে ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন বাদী। বিচারক তার আর্জি শুনে অভিযোগ তদন্ত করে পিবিআইকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর চ্যানেল আইয়ের একে আলোচনা অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে ‘রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে’ আখ্যায়িত করেন। গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি সেমিনারে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ‘মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না’। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে ‘অনুপ্রবেশকারী’।
এছাড়া জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হাসান পলাশ গত ১৯ অগাস্ট নোয়াখালীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে আরেকটি মামলা করেন।
সেখানেও জিয়াউর রহমান সম্পর্কে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ করার অভিযোগ আনা হয়েছে সাবেক বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে।
Leave a Reply