সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী শুধুমাত্র সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে-এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জকিগঞ্জে একযোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে অর্ধশতাধিক কিন্ডারগার্টেন স্কুল। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও বাজারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলোর ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা অংশ নেন।
বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনের মধ্যে ছিল-শাহগলী পয়েন্টে শাহগলী আদর্শ শিশু নিকেতন, দি চাইল্ড কেয়ার স্কুল, আটগ্রামে লতিফিয়া ইসলামিক আইডিয়াল একাডেমি, কালিগঞ্জ বাজারে সীমান্তিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, হাবিবিয়া ক্যাডেট স্কুল, ইছামতি স্কলার্স একাডেমি, কসকনকপুরে উদয়ন স্কুল, ইউনিয়ন অফিস বাজারে শাহজালাল ইসলামিক আইডিয়াল স্কুল, আল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি, উত্তরকুলে মোশাহিদিয়া আইডিয়াল কেজি স্কুল, হাসিতলায় হাসিতলা কেজি স্কুল, কামালগঞ্জে মর্নিং স্টার, আব্দুল আজিজ একাডেমি, গঙ্গাজল বাজারে ট্যালেন্টহোম স্কুল, বাবুর বাজারে কুসুমকলি কিন্ডারগার্টেন, মেরিটহোম ও গোল্ডেন একাডেমি, ঈদগাহ বাজারে রাইজিং সান স্কুল, মাসুম বাজারে বিরশ্রী ইসলামিক কেজি, রতনগঞ্জ বাজারে চাইল্ডহোম স্কুল, হাড়িকান্দিতে দারুল আজহার একাডেমি এবং ভরণ-মুমিনপুরে কর্ডোভা মডেল একাডেমি।
এছাড়াও দুপুর সাড়ে ১২টায় জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনে জকিগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে আরও একটি কেন্দ্রীয় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে পৌর এলাকার আল ইহসান একাডেমি, জকিগঞ্জ আইডিয়াল কেজি স্কুল, জকিগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন, ক্যাডেটহোম স্কুল ও সাবআ সানাবিল স্কুলের ছাত্র-শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেন।
এসময় মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন জকিগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাওলানা কাজী হিফজুর রহমান এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক কে এম মামুন। সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন—ক্যাডেটহোম স্কুলের প্রিন্সিপাল সিরাজ উদ্দিন, জকিগঞ্জ কিন্ডারগার্টেনের প্রিন্সিপাল শফিকুর রহমান, আল ইহসান স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল আহমদ আল আযাদ, সাবআ সানাবিল স্কুলের পরিচালক রাজু আহমদ, অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ ইয়াহিয়া আহমদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক তারেক আহমদ এবং দারুল আজহারের পরিচালক আব্দুল হামিদ।
বক্তারা বলেন, গত ১৭ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে যাতে বলা হয়—শুধুমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। বক্তারা এই সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণভাবে বৈষম্যমূলক বলে আখ্যায়িত করেন এবং বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার পথে এটি এক ধাপ পেছনে যাওয়া। তাঁরা বলেন, সবধরনের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ থাকা উচিত। কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা নেয়া হলে তা হবে অযৌক্তিক ও পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত।
মানববন্ধন শেষে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এতে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন বাতিল করে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন ও অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
এছাড়াও মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে যেই জুলাই অভ্যুত্থানে হাজারও ছাত্রজনতা শহীদ হয়েছেন সেই জুলাই মাসেই শিক্ষা ক্ষেত্রে এই বৈষম্য কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই সরকার হচ্ছে জুলাই আন্দোলনের ফসল। প্রাথমিকে পড়ুয়া শিশুদের একটা বৃহৎ অংশ কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়াশুনা করেন তাদেরকে বাদ দিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে সেটা হবে চরম বৈষম্য, যা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। কিন্ডার গার্টেন স্কুলে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের বাদ দিয়ে কোনভাবেই শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন সম্ভব নয়।
শিক্ষা ক্ষেত্রে এই বৈষম্য দূর করার জন্য শিক্ষা উপদেষ্টাসহ প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন বক্তারা। অন্যথায় সারা বাংলাদেশের কিন্ডারগার্টেনে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের নিয়ে কঠোর আন্দোলন ডাক দিতে বাধ্য হবেন বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
Leave a Reply