1. admin@zakiganjsangbad.com : admin :
মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সিলেটের জকিগঞ্জে বিএসএফের বাঁধায় আটকে আছে শতকোটি টাকার পাম্প হাউস! জকিগঞ্জে টপ-টেন বিজনেস গ্রুপের আলোচনা সভা ও শীতবস্ত্র বিতরণ জকিগঞ্জে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নগদ টাকা-স্বর্ণালঙ্কার লুট জকিগঞ্জের কামালপুর গ্রামের নিজস্ব অর্থায়নে কোটি টাকা ব্যায়ে ৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজের শুভ উদ্বোধন! জকিগঞ্জ প্রেসক্লাবে মতবিনিময় করেছেন যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা এম. ফরিদ উদ্দিন জকিগঞ্জে টমটম-মোটরসাইকেল ও ঠেলাগাড়ির ত্রিমূখী সংঘর্ষে যুবক নিহত: আহত-৩ জকিগঞ্জে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি গঠন সম্পন্ন জকিগঞ্জের গোটারগ্রামে এক রাতে ৭টি দোকানে চুরি! নিঃস্ব স্বল্প পূজির ব্যবসায়ীরা জকিগঞ্জের কালিগঞ্জ বাজারের একটি ভবনে আগুন: ১৪ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি জকিগঞ্জে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচির সমন্বয় সভা

সিলেটের জকিগঞ্জে বিএসএফের বাঁধায় আটকে আছে শতকোটি টাকার পাম্প হাউস!

রহমত আলী হেলালী
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৩৭৬ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

সিলেটের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বাঁধায় ৯ বছর থেকে আটকে আছে প্রায় শতকোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত রহিমপুর পাম্প হাউস। ফলে বিগত ১৬ বছর থেকে লাভের চেয়ে বেশী ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছেন এলাকার লক্ষাধিক কৃষক। পাম্প হাউস নির্মাণ করতে গিয়ে ২০১০ সালে রহিমপুরী খালের মুখে একটি ক্রস বাঁধ দিয়ে পানি আটকানো এখন এতদাঞ্চলের মানুষের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। রহিমপুরী খাল দিয়ে পানি আসার পথ একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রহিমপুরী খালের তীরবর্তী ১৫/২০টি গ্রামের কৃষকরা চাষের জমিতে পানি সেচ দিতে না পেরে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এনিয়ে সীমান্তবর্তী এতদাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে চাঁপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা যায়, জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর উৎসমুখ থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে শরীফগঞ্জ বাজারের পাঁশেই কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুর খালটির উৎপত্তি। প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাকৃতিক খালটি আরও অনেক খালের উৎপত্তিস্থল। কুশিয়ারা নদী থেকে এই খাল দিয়ে প্রবাহিত পানি কয়েক শতাব্দী ধরে জকিগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ কৃষিভূমি ও হাওরাঞ্চল ছাড়াও কানাইঘাট ও বিয়ানীবাজার উপজেলার কিছু অংশের পানি প্রবাহের অন্যতম উৎস ছিল।
তবে উৎসমুখে কুশিয়ারা নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় গত কয়েক যুগ ধরে রহিমপুর খালে শুকনো মৌসুমে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এ কারণে অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমিতে রবিশস্য ও আরও বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলে বোরো চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছিল। তাই শুকনো মৌসুমে অনাবাদী থাকা জমিকে চাষযোগ্য করার লক্ষ্যে ‘আপার সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের’ অধীনে ২০১০ সাল থেকে রহিমপুর খালের উৎসমুখে একটি পাম্প হাউস নির্মাণ ও রহিমপুরসহ এই চেইনের বেশ কিছু খালের উন্নয়ন কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। প্রকল্পের সুবিধার্থে ২০১০ সালে কুশিয়ারা নদীর পাড়ে খালের উৎসমুখে বাঁধ নির্মাণ করা হয়।
৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালে খাল উন্নয়ন ও পাম্প হাউসের নির্মাণ কাজ শেষ করে পাউবো। পরবর্তীতে খালখনন ছাড়াও বাঁধ রক্ষায় ব্লক ফেলাসহ সার্বিক ব্যায় হয়েছে শতকোটি টাকা। শতকোটি টাকা ব্যায়ে পাম্প হাউস নির্মাণ শেষে রহিমপুর খালে পুনরায় পানি প্রবাহ চালু করতে উৎসমুখে নির্মিত বাঁধ অপসারণ করতে গেলে বাঁধা দেয় ভারত। কুশিয়ারার নদীর ঠিক মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সীমান্তরেখা। এ কারণে এ নদীর বাংলাদেশের পাড় নো-ম্যানস ল্যান্ডের অংশ হওয়ায় ভারতের বাঁধার মুখে পড়ে বাঁধ অপসারণ কাজ।
বিষয়টি সুরাহা করতে ২০১৬ সাল থেকে ‍দুই দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের বৈঠক শেষে ২০২২ সালের ২১ আগস্ট যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুর খাল দিয়ে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় এবং ভারতের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে তখন বলেছিলেন, এবারের সফরে গঙ্গার পর প্রথমবারের মতো অভিন্ন নদী কুশিয়ারা থেকে সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের আওতায় ১৫৩ কিউসেক পানি বণ্টনে আমরা একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। এই সমঝোতা স্মারকের ফলে রহিমপুর সংযোগ খালের মাধ্যমে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা পাওয়া যাবে। এতে কুশিয়ারা পাড়ের পাঁচটি উপজেলায় মোট ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা পাওয়া যাবে। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন ২০২২ সালের নভেম্বরে বোরো মৌসুম শুরু হওয়ার আগে চুক্তি অনুযায়ী পানি প্রত্যাহার শুরু করা সম্ভব।
কিন্তু চুক্তি সই হওয়ার আড়াই বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও রহিমপুর পাম্প হাউস চালু না হওয়ায় এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে শংকা দেখা দিয়েছে। ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের বাঁধায় বাংলাদেশ রহিমপুর পাম্প হাউসের সম্মুখের বাঁধ অপসারণ করতে পারছেনা বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এতদাঞ্চলের লক্ষাধিক কৃষক।
স্থানীয় কৃষকদের মতে, আগে রহিমপুর খাল তেমন নাব্য না হলেও পানি কিছুটা আসত। খালে ধরে আসা পানি দিয়ে অল্পবিস্তর কৃষিকাজ চললেও খাল খনন ও পাম্প হাউজ নির্মাণকাজের সুবিধায় ২০১০ সালে রহিমপুর খালের মুখে ক্রস বাঁধ নির্মাণের পর পানির আসার পথ একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছেন। বিগত ১৬ বছর থেকে রহিমপুর খালের মুখে বাঁধ দেয়ায় খালে পানি না থাকায় ওই এলাকায় জমিতে সেচ দিতে পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
পানির প্রবেশমুখ বন্ধ করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা বলেন, “রহিমপুর পাম্প হাউসটা তৈরি করার জন্য খালের মুখে একটা ক্রস ড্যাম দেওয়া হয়েছে, যাতে বন্যার পানি উঠে পাম্প হাউস নির্মাণ কাজকে ডিস্টার্ব না করে। “কিন্তু পাম্প হাউস তৈরি করার পর যখন ক্রস বাঁধটা উঠানোর চেষ্টা হয়েছিল, তখন বিএসএফ বলে বসল, এটা নো-ম্যান্স ল্যান্ডের মধ্যে হইছে, এটা উঠানো যাবে না।”
সচেতন মহলের মতে, চুক্তির মাধ্যমে পানি আনা সম্ভব হলে শুষ্ক মৌসুমে ৫ হাজার হেক্টর জমির কৃষকরা উপকৃত হবেন। কৃষকরা বর্তমানে কেবল আমন উৎপাদন করেন, চুক্তি অনুযায়ী বাঁধ খোলে দিলে বোরো সহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। খালে খালে পানি যাবে, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, বিয়ানিবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়। ফলে ৫টি উপজেলার মানুষ উপকৃত হবেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা সাদিকুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ২০১০ সালের আগে এখানে শুষ্ক মৌসুমে অল্পস্বল্প চাষাবাদ হলেও রহিমপুর খালের মুখে বাঁধ দেওয়ার পর তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। চুক্তির অনুযায়ী পানি পেলে শুষ্ক মৌসুমেও চাষাবাদ করা সম্ভব।
বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে জকিগঞ্জের ৭নং বারঠাকুরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মহসিন মর্তুজা চৌধুরী বলেন, রহিমপুর পাম্প হাউস চালু না হওয়ায় এলাকার কৃষকরা সীমাহীন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিএসএফের বাঁধায় বাঁধ তোলা যাচ্ছেনা এই অযুহাতে বছরের পর বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। তিনি রহিমপুরী খালের মুখে দেয়া বাঁধ দ্রুত অপসারণ করে পাম্প হাউস চালুর বিষয়ে সরকারের প্রতি আহবান জানান।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জকিগঞ্জ শাখা কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সমঝোতা সই হলেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বাঁধায় এখনো বাঁধ অপসারণ করা সম্ভ হচ্ছে না। তবে পাম্প হাউস ও খালের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। দ্রুততম সময়ে সকল আনুষাঙ্গিক কাজ শেষ করে বাঁধ অপসারণ ও পাম্প হাউজ চালু করতে পারলে এলাকাবাসী উপকৃত হবেন।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
জকিগঞ্জ সংবাদ-এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
প্রতিষ্ঠাতা: রহমত আলী হেলালী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায় সিসা হোস্ট