সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১৪৩২ বঙ্গাব্দ সনের উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ২৭টি হাট-বাজার প্রদানে ২৪ লক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে ইউএনও’র বিরুদ্ধে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সিলেট জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ইজারা গ্রহণে আগ্রহী ১৫ জন ক্রেতা।
অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, সিলেটে বিভাগের বৃহৎ গ্রামীণ বাজারের মধ্যে জকিগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ ও শাহগলী বাজার। গত বছর শাহগলী বাজার ৭০ লাখ এবং কালিগঞ্জ বাজার ৫৫ লাখ টাকায় ইজারা দিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। তবে এ বছর সেই বাজার দুটিই যথাক্রমে ১৪ ও ১০ লাখ টাকা কম মূল্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে কম ইজারা মূল্য নেওয়া হয়েছে উপজেলার আরও ২৫টি বাজারের ক্ষেত্রে। নিয়মনীতির তেমন কোন তোয়াক্কা না করে মাইকিং বা প্রচারণা ছাড়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারগুলো কম মূল্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান না থাকার সুযোগে প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ করে’ স্থানীয় রাজনৈতিক একাধিক নেতা এ কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এতে সরকার বড় অংকের রাজস্ব হারিয়েছে।
ডিসি বরাবর আবেদনে ১৫ জন উল্লেখ করেছেন, প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই গত ১২ ফেব্রুয়ারি, বুধবার হাটবাজারগুলো ইজারা দেন জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমান। ওই দিন লোকমুখে জানতে পেরে তারা ইজারায় অংশ নিতে চাইলেও বাঁধা দেওয়া হয়। ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে নির্ধারিত লোকদের ডেকে নিয়ে ইজারা দিয়েছেন ইউএনও তা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। অথচ হাটবাজার ইজারা সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি অফিস-আদালত ও জনসমাগমস্থলে নোটিশ টাঙিয়ে বা নির্দিষ্ট বাজারে মাইকিং করে ইজারার বিষয়টি জানাতে হবে।
তারা আরও উল্লেখ করেন, পূর্ব সিলেটের বড় হাট জাকিগঞ্জের কালিগঞ্জ ও শাহগলী বাজার ইজারা নিতে প্রতিবছর অনেক সিডিউল বিক্রি হয়। এবার ঘটেছে উল্টো। গত বছর শাহগলী বাজার ৭০ লাখ টাকায় ইজারা হলেও এবার ৫৬ লাখ ৬০ হাজার টাকায় দেওয়া হয়েছে। এতে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় ১৪ লাখ টাকা। অপরদিকে কালিগঞ্জ বাজার ৪৫ লাখ ৯০ হাজার টাকায় ইজারা দিলেও গত বছর তা ছিল ৫৫ লাখ টাকা। সরকারি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে পুনরায় ইজারার দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে ইজারা নিতে আগ্রহী একাধিক ব্যক্তি জানান, বিগত বছরগুলোতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচারের পাশাপাশি ইউএনও’র অফিসিয়াল ফেসবুক আইডিতে তা প্রচার করা হতো। এবার কিন্তু ইউএনও সিন্ডিকেট করে গোপনে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে এবং ওয়েব সাইটে আপলোড করে ইজারা নিতে আগ্রহীদের ঘুমের মধ্যে রেখে নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের ইজারা দিয়েছেন।
জকিগঞ্জ পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুস শাকুর বলেন, সমঝোতা করে দরপত্র দেওয়া হয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিলেও তিন বছর ধরে উপজেলায় পত্রিকা আসে না। ভালো করে প্রচার-প্রচারণা করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ইজারা দেওয়া হয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে। সরকারি মূল্যের নিচে যাওয়ার সুযোগ নেই। গত বছরের চেয়ে এবার কম মূল্যে ইজারা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দামদর তো উঠা নামা করে। তবে সরকারি নিয়ম মেনেই ইজারা দেয়া হয়েছে। ইউএনও’র অফিসিয়াল ফেসবুক আইডিতে বিজ্ঞাপন প্রচার না করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ফেসবুকে এতটা এক্টিভ না।
Leave a Reply