ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার খাল-বিল, হাওর ও নদ-নদী সহ সবদিকে এখন থইথই পানি। উপজেলার নিম্নাঞ্চলের গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট এখন পানির নীচে। এ কারণে জমে উঠেছে জকিগঞ্জ উপজেলার চৌধুরী বাজারে অবস্থিত শতবর্ষী নৌকার হাট। বৃহত্তর হাওর অঞ্চলের মতোই চলতি বন্যায় এলাকার বেশির ভাগ মানুষের জীবন-জীবিকার অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে নৌকা। সিলেটের পূর্বাঞ্চলের সুপরিচিত এ নৌকার হাটকে স্থানীয়রা “নাও’র বাজার” বলে থাকে। চৌধুরী বাজারে প্রতি বুধবার বিভিন্ন ধরণের ছোট-বড় নৌকা নিয়ে আসেন স্থানীয় বিক্রেতারা। বর্ষাকালে এই নৌকা দিয়ে এলাকার মানুষের যাতায়াত, মাছ ধরা, গরুর খাবার সংগ্রহ ও মালামাল বহন করাসহ নানা কাজ করা হয়। আর সে জন্য বর্ষা মৌসুমে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের গন্তব্য জকিগঞ্জ উপজেলার চৌধুরী বাজার নৌকার হাট।
স্থানীয়দের নিকট থেকে জানা যায়, আনুমানিক ১০০ বছর আগে সর্বপ্রথম জকিগঞ্জের চৌধুরী বাজারের পাঁশে অবস্থিত কুল নদীতে নৌকার হাট বসে। সপ্তাহের প্রতি বুধবার বাজার দিনে শতাধিক নৌকা বিক্রির জন্য ওঠে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকা কেনাবেচা চলে।
এলাকাবাসী জানান, আগেকার দিনে এতদাঞ্চলে রাস্তা-ঘাটের সুবিধা না থাকায় প্রতি বুধবার দুপুর থেকে রাত অবধি শতশত নৌকা কেনা-বেচা হতো। তখনকার দিনে নৌকা মিস্ত্রির কদর ছিল চোখে পড়ার মতো। সে সময় নৌকার অতিরিক্ত চাহিদার ফলে কামালপুর, জামুরাইল, পশ্চিম গোটারগ্রাম, নিলাম্বরপুর, সোনাপুর, জামালপুর, যশা, কেরাইয়া, দাউদপুর, জিয়াপুর সহ বেশ কিছু গ্রামের অনেকে পেশা হিসেবে নৌকা মিস্ত্রির কাজ করতেন। সব মৌসুমেই তাদেরকে নৌকা তৈরি করতে দেখা যেত। তবে বিগত কয়েক বছর থেকে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় নৌকার তেমন একটা চাহিদা বুঝা যায়নি। ২০২২ সালের পরপর দু’টি বন্যা ও চলমান বন্যার কারণে আবারও যৌবন ফিরে পেয়েছে চৌধুরী বাজারের প্রাচীনতম নৌকার হাট।
বুধবার বিকেলে স্থানীয় চৌধুরী বাজার নৌকার হাটে গিয়ে দেখা যায়, শতশত নৌকা নিয়ে বিক্রি করতে এসেছেন স্থানীয় নৌকা বিক্রেতারা। আর নৌকা ক্রয় করতে এসেছেন সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা।
কয়েকজন ক্রেতা ও বিক্রেতা জানান, ১২ থেকে ১৪ হাত লম্বা নৌকার মূল্য সাড়ে ৯ হাজার থেকে ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এতে সব নৌকা সমান নয়। নতুন ও পুরাতন নৌকাও আছে। নৌকা অনুপাতে দাম রয়েছে। একেবারে ছোট নৌকা ৫-৭ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
Leave a Reply