জকিগঞ্জে স্বামী কর্তৃক সাজানো ঘটনায় পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে স্ত্রীর পরিবারকে হয়রানীর অপচেষ্টা বন্ধে স্ত্রী শোভা বেগম পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
রোববার (২১ আগস্ট) বিকাল ২ ঘটিকায় জকিগঞ্জ উপজেলার ৩নং কাজলসার ইউনিয়ন- এর ৭নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত কামালপুর শাহী ঈদগাহ মাঠে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জকিগঞ্জ উপজেলার কামালপুর গ্রামের আব্দুল জলিল-এর একমাত্র মেয়ে শোভা বেগম লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর পারিবারিকভাবে ইসলামী শরীয়তের বিধান মতে ও রেজিস্ট্রি নিকাহনামা মূলে ৪ লক্ষ টাকা মোহরানা ধার্য্য করে তাকে পারিবারিকভাবে উপজেলার উত্তরকুল গ্রামের শরাফত আলীর ছেলে ছালিক আহমদ-এর সাথে বিবাহ দেন। বিয়ের প্রথম ২/৩ বছর সে স্বামীকে নিয়ে সুখ শান্তিতে ঘর সংসার করেন। কিন্তু বিয়ের ২/৩ বছর পর থেকেই বহু নারী আসক্ত হয়ে পড়েন স্বামী ছালিক আহমদ। এক পর্যায়ে স্বামী একেবারে নির্লজ্জের মতো স্ত্রীকে কাছে রেখে এসব নারীদের সাথে মোবাইল ফোনে ও ভিডিও কলে অশ্লীল কথা-বার্তা বলতে শুরু করেন। একের পর এক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। এক পর্যায় স্ত্রীকে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দিলে ভবিষ্যত সুখ শান্তি আসবে বলে প্রলোভন দেখাতে শুরু করেন। চাঁপে পড়ে শেষ পর্যন্ত স্ত্রী নিজ স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দিতে সম্মত হলে বিয়ের অনুমতিপত্রের কথা বলে নানা যুক্তি দেখিয়ে স্বামী পৃথক পৃথক কাগজে স্ত্রী ও শশুরের স্বাক্ষর নিয়ে রাখেন। দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি পেয়েই স্বামী ছালিক আহমদ বেপরোয়া হয়ে উঠে। নির্যাতনের মাত্রা অতিতের চেয়ে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। স্বামী কর্তৃক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে প্রায় ৬ মাস আগে এক কাঁপড়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন স্ত্রী শোভা বেগম। স্ত্রী বাবার বাড়িতে চলে আসলে নতুন বিয়ে করেন স্বামী ছালিক আহমদ। খোঁজ খবর ছেড়ে দেন প্রথম স্ত্রীর। তাই দীর্ঘ ৫ মাস বাবার বাড়িতে থেকে উপায়ন্তর হয়ে মোহরানা ও বিয়েতে দেয়া উপহার সামগ্রী উদ্ধারে আদালতের দ্বারস্থ হন স্ত্রী শোভা বেগম। গত মাস দেড়েক আগে শোভা বেগম সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালত, জকিগঞ্জ, সিলেট-এ পারিবারিক মোকদ্দমা দায়ের করলে তার স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। নানাভাবে নানা লোকের নিকট হুমকি ধমকি দিতে শুরু করেন ছালিক আহমদ। আদালতে দায়েরকৃত মামলা তুলে বিষয়টি সমাধান না করলে মামলা কাকে বলে এবং উহা কত প্রকার তা তিনি দেখিয়ে দিবেন বলে হুমকি দিতে শুরু করেন। স্বামীর কথা মতো বিষয় সমাধান না করলে স্ত্রীর বাপ-ভাই কেউ আলোরমূখ দেখবেন না এবং সারা জীবন স্ত্রীর বাবা, চাচা ও ভাইয়েরা জেল হাজতে থাকতে হবে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দেন।
শোভা বেগমের দাবী, তার সুচতুর স্বামী মোহরানায় কোন ছাড় না পেয়ে পরিকল্পিতভাবে একটি ঘটনার সৃষ্টি করে তার বাবা, চাচা ও ভাইদের মিথ্য মামলা দিয়ে হয়রানির অপচেষ্টা করছে। তিনি পুলিশের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, আপনারা আপনাদের নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে প্রকৃত অপরাধী চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। তিনি তাকে এবং তার নিরীহ নিরপরাধ ও সহজ সরল বাবা, চাচা ও ভাইদের আমার স্বামীর হয়রানি থেকে মুক্ত করতে পুলিশের প্রতি অনুরোধ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জকিগঞ্জ থানা পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যাতে মিথ্যা ও পরিকল্পিত সাজানো ঘটনায় তার বাবা, চাচা ও ভাইয়েরা হয়রানীর শিকার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে অনুরোধ করেন। তার স্বামী যেভাবে একের পর এক সম্পূর্ণ মিথ্যা নাটক সাজিয়ে ও বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে তার বাবা, চাচা ও ভাইদের হয়রানীর চেষ্টা করে যাচ্ছে, তা থেকে তার গরীব ও অসহায় পরিবারের বাবা-ভাই রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই বলে স্ত্রী শোভা বেগম শংকা প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন, যদি পুলিশ ও সাংবাদিকরা আন্তরিভাবে তা খতিয়ে দেখেন তবে প্রকৃত সত্য খুব সহজেই বেরিয়ে আসবে। আর এতেই মুক্তি পাবে তাদের এই অসহায় পরিবার।
শোভা বেগম নিজেকে একজন নিরীহ, নিরপরাধ ও অসহায় নারী দাবী করে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে তার সহজ সরল পরিবারকে সহযোগিতার জন্য পুলিশ ও সাংবাদিকদের প্রতি সংবাদ সম্মেলনে অনুরোধ জানান।
Leave a Reply