বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি)’র আন্তর্জাতিক মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ আইনজীবী ব্যারিস্টার সাইফ উদ্দিন খালেদ। বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) আইসিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাসুদ রানার পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
সিলেটের জকিগঞ্জ কৃতি সন্তান ব্যারিস্টার সাইফ উদ্দিন খালেদ বর্তমানে লন্ডন বরো অব টাওয়ার হ্যামলেটসের স্পিকার এবং স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত কাউন্সিলর। তিনি লন্ডনের পারিবারিক, ইমিগ্রেশন ও অন্যান্য আইনি বিষয়ে পেশাগতভাবে কাজ করেন এবং বার স্ট্যান্ডার্ডস বোর্ডের রেজিস্টারে নিবন্ধিত। শিক্ষা জীবনে তিনি বাকিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (১৯৯১), অ্যাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবাধিকার আইনে এলএলএম (১৯৯৩) এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক আইনে এলএলএম (১৯৯৫) ডিগ্রি অর্জন করেন। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাঁকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশন দলের গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর (আন্তর্জাতিক মুখপাত্র) হিসেবে এক বছরের জন্য অবৈতনিক ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছে।
জানা যায়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, আইনজীবী হিসেবে সফল পথচলা এবং বহুমাত্রিক কূটনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনায় তাঁকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমকে বৈশ্বিক মহলে আরও শক্তিশালী ও প্রভাব বিস্তারকারী করতে তাঁর এই নিয়োগকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ব্যারিস্টার সাইফ উদ্দিন খালেদ একটি সুপরিচিত নাম। প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজেও তিনি একজন সক্রিয় সংগঠক ও নেতৃত্বের পরিচিত মুখ। তাঁর নেতৃত্বে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অভিবাসী বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ আরও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। আইন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার খালেদ যুক্তরাজ্যের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ থিংকট্যাংক ‘রয়্যাল ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স-চ্যাথাম হাউজ’-এর সদস্য। আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও নীতিনির্ধারণী গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠান বিশ্ব রাজনীতি, মানবাধিকার এবং বিচারব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করে থাকে। এছাড়া তিনি ‘প্রেস্টিজিয়াস লন্ডন মেয়র’স এসোসিয়েশন’-এর আজীবন সদস্য এবং দ্যা সোসাইটি অব ব্রিটিশ বাংলাদেশী সলিসিটরস-এর সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে তাঁর সক্রিয় সংশ্লিষ্টতা আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাঁর যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতাকে আরও সুদৃঢ় করেছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ব্যারিস্টার সাইফ উদ্দিন খালেদের শিকড় সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার আমলশীদ গ্রামে। তিনি আমলশীদ গ্রামের বিশিষ্ট শিক্ষক মাস্টার রফিকুল ইসলামের পুত্র। শিক্ষাবিদ পরিবারের সন্তান হিসেবে ছোটবেলা থেকেই তিনি শিক্ষা, নেতৃত্ব এবং জনসেবার আদর্শ ধারণ করেন।
পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে গিয়ে তিনি আইন পেশায় ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন এবং ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেন।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আন্তর্জাতিক মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তাঁর দায়িত্ব হবে ট্রাইব্যুনালের কর্মকাণ্ড, অবস্থান এবং অগ্রগতি আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরা। বিশেষ করে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ও প্রচেষ্টাকে বৈশ্বিক পরিসরে তুলে ধরতে তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আন্তর্জাতিক মিডিয়া, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কূটনৈতিক মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে ট্রাইব্যুনালের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করা—এই দায়িত্বও এখন তাঁর ওপর ন্যস্ত। সংশ্লিষ্ট মহলের বিশ্বাস, তাঁর অভিজ্ঞতা ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দৃশ্যমান করতে বড় ভূমিকা রাখবে। তাঁর এই নিয়োগ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিচারব্যবস্থা অঙ্গনে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেও অনেকে মনে করছেন।
Leave a Reply