জকিগঞ্জ উপজেলার ৯নং মানিকপুর ইউনিয়নের পূর্ব মানিকপুর গ্রামের বাসিন্দা ও কালিগঞ্জ বাজারের নিরীহ ব্যবসায়ী নুমান উদ্দিন হত্যা মামলার বাদী নিহতের বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি সরাসরি কথা না বললেও মোবাইল ফোনে আলাপ করেছেন জকিগঞ্জ সংবাদ-এর সাথে। সিলেট পার্কভিউ নার্সিং কলেজের বিএসসি নার্সিং চতুর্থ বর্ষের এই ছাত্রী গত ৫ ও ৬ অক্টোবর মোবাইল ফোনে আলাপকালে জকিগঞ্জ সংবাদকে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। আমরা সরাসরি তাকে করা প্রশ্ন ও এর জবাব জকিগঞ্জ সংবাদ পাঠকদের নিকট তুলে ধরছি।
জকিগঞ্জ সংবাদ: মামলার কি কোন রহস্য উদঘাটন হয়েছে? বা খুনিদের চিহ্নিত করা গেছে?
জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি: জি সত্যটা বেরিয়ে আসলে আমি আপনাদের সাথে যোগাযোগ করবো। মুটামুটি তথ্য বের হয়ে আসলে আমি আপনাদের সাথে যোগাযোগ করবো। খুব তাড়াতাড়ি রহস্য বেরিয়ে আসবে। সত্য বেশী দিন চাঁপা থাকেনা।
জকিগঞ্জ সংবাদ: তোমার মামা হানিফ উদ্দিন সুমন জড়িত থাকার বিষয়ে একটু বলবে?
জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি: আমার মামাকে জড়ানোর বিষয়টি শতভাগ মিথ্যা। আমার মামা সম্পূর্ণ নির্দোষ ও নিরপরাধ। কারণ আমার বাবার আগে অঢেল সম্পদ ছিল, যদি আমার মামার এ ধরণের চিন্তাধারা থাকতো তাহলে আগেই এমন কাজ করতেন। এখন তো আমার বাবা সাধারণ একজন ব্যবসায়ী। আগের মতো আমার বাবার যদি অঢেল সম্পত্তি থাকতো তাহলে আমি জিনিসটা মেনে নিতে পারতাম। মূল সমস্যা হচ্ছে-আমার বাবার একটি স্বত্ত্ব মামলা উনার চাচাতো ভাই ও ফুফুর সাথে চলমান। এই মামলার তারিখ ছিল ৩০ অক্টোবর। আমার আব্বা ২৯ তারিখ নিখোঁজ। এখানে তো একটি বড় রহস্য রয়েছে।
জকিগঞ্জ সংবাদ: এলাকার মানুষ তোমার বাবার স্বত্ত্ব মামলার কারণে এ ধরণের ঘটনা ঘটেনি বলে মনে করছেন। এলাকার সব ধরণের মানুষ এ ঘটনা তোমাদের পরিবার ঘটিয়েছে বলে মনে করে। তোমাদের সাথে কি পুরো এলাকার মানুষের বিরোধ রয়েছে?জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি: আমাদের পরিবারের সাথে এলাকার কারো বিরোধ নেই। তবে আমার মামা হানিফ উদ্দিন সুমন আওয়ামী লীগ করার কারণে আগে দাপট ছিল। এখন তো আর মামার আগের মতো দাপট নেই। তাই সবার মধ্যে হিংসা কাজ করছে। তবে ইনশাআল্লাহ, খুব তাড়াতাড়ি সত্যটা বেরিয়ে আসবে। আমি তো মিথ্যা কারো উপর অপবাদ দিতে পারিনা। আমি তো একজন মুসলমান মানুষ। আমি চাই, পুলিশ তদন্ত করে সত্যটা বের করুক।
জকিগঞ্জ সংবাদ: পুলিশ ১০/১৫ জন লোকের জবানবন্দি নিয়েও কি এখন পর্যন্ত কোন তথ্য উদঘাটন করতে পারে নাই?
জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি: পুলিশ ১০/১৫ জন লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করার বিষয়টি ভূয়া। মূলত আমাকে, আমার ছোট বোনকে এবং আমার মামানিকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে পজেটিভ উত্তর পেয়েছে পুলিশ। কোন নেগেটিভ উত্তর পায়নি। আর আমার মামাকে এনেছে আর শায়লা হাসপাতালের কেয়ারটেকার তেরা মিয়াকে এনেছে। জিজ্ঞাসাবাদ করে আমার ছোট বোন ও মামানিকে ছেড়ে দিয়েছে।
জকিগঞ্জ সংবাদ: তাহলে তাহলে কি তুমি মনে করো প্রকৃত অপরাধী এখনো আড়ালে রয়ে গেছে?
জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি: জি। এই ঘটনাকে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সত্যটাকে আড়াল করে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জকিগঞ্জ সংবাদ: ঘটনার পরপর তোমার একটা ইন্টরভিউতে তোমার কথা-বার্তার ধরণটা সুন্দর ছিলনা এবং তোমার বাবার মৃত্যুতে একটুও আঘাত লেগেছে বলে মনে হয়নি কেন?
জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি: ইন্টারভিউয়ের বিষয়টি হচ্ছে- আমি উনার সাথে প্রথমে খুবই নরম কন্ঠে কথা বলেছি। তিনি পয়ত্রিশ মিনিট আমার বক্তব্য নিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আমার কথাগুলো কাট কাট করে আমার কথাগুলো ছেড়েছেন। আমি অনেক বিষয়ে উনাকে ইনফরমেশন দিলেও তিনি তা উল্লেখ করেন নি। তিনি কিছু কথা বলে আমাকে উত্তেজিত করে ওই উত্তেজিত অংশটুকু ফেসবুকে ছেড়েছেন। একজন সন্তানের সর্বোচ্চ মাথার ছায়া ভেঙ্গে যাওয়ার পর উল্টোপাল্টা কথা শোনলে একজন মেয়ের কেমন লাগবে বলুন? এই যে আপনি আমাকে সুন্দর করে প্রশ্ন করছেন। আমিও যতটুকু পারছি সুন্দর করে জবাব দিচ্ছি। উনি আমাকে এমনভাবে প্রশ্ন করেছেন যা নিয়মিত হেনস্থা বললে চলে। উনার উল্টাপাল্টা প্রশ্নে একজন মানুষের অটোমেটিক রাগ উঠা স্বাভাবিক। বাস্তবে তখন আমি ইন্টারভিউ দেয়ার মতো কোন অবস্থায় ছিলাম না।
জকিগঞ্জ সংবাদ: জকিগঞ্জ থানায় সমস্ত রাত তোমার বাবার লাশ একা পড়ে থাকলো, অথচ তোমরা কেউ তখন পাঁশে নেই! কারণ কি জানতে পারি?
জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি: আমরা মেয়ে মানুষ, আমাদের জন্য রাতে বাবার লাশের পাঁশে থাকা সম্ভব না। আমার মামাকে পাঠানোর জন্য বললে পুলিশ সম্ভত জুয়েল নামে এক ব্যক্তিকে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে বলেছেন-সুমনকে বলবেন সে ঘর থেকে বের না হতে। ঘর থেকে বের হলে হামলা হবে। পরে আমি আমাদের তরফ থেকে পাঁচজন লোক আমার বাবা’র লাশ পাহারা দেয়ার জন্য সিলেক্ট করে দিতে চেয়েছিলাম। এলপর শুনেছি আমার রিয়াজ চাচা, আল-আমিন ও আলম লাশের সাথে ছিলেন। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার লাইভ করতে আমার চাচাদের আড়ালে রেখে লাইভ করেছেন। পরদিন সকালে আমি গিয়েছি এবং আমার বাবা’র লাশের ময়নাতদন্ত কাছে থেকে করেছি। আমার সিলেট যেতে দেরী হওয়ায় আমার একজন নানা সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত জকিগঞ্জের সহিদাবাদ গ্রামের আব্দুল হালিম উনাকে মর্গে পাঠিয়েছি। আমার আরেকজন খালার স্বামীকে সেখানে পাঠিয়েছি। এছাড়াও বিয়ানীবাজার ভোলাঘাট এলাকার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি একল চৌধুরীকেও সেখানে পাঠিয়েছি।
জকিগঞ্জ সংবাদ: তোমাদের বাড়িতে সিসি ক্যামেরা ছিল। এখন সিসি ক্যামেরা কোথায়?
জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি: আসলে আমাদের বাড়িতে কোন সিসি ক্যামেরা সেটিংস ছিলনা। শুধুমাত্র এমনিতে বাড়িতে ক্যামেরা লাগানো ছিল। এই ক্যামেরার কাজ করেছেন কোনাগ্রামের হিন্দু এক ইলেকট্রিশিয়ান কাজল ভাই। উনাকে জিজ্ঞাসা করলে বাস্তব বিষয়টি জানতে পারবেন। আসলেও দেখতে পারবেন বাস্তবে সিসি ক্যামেরা সেটিংস ছিল কিনা। কোন দিনও সিসি ক্যামেরা সচল ছিলনা। প্রকৃত অর্থে আমাদের কয়েকটি সিএনজি গাড়ি রয়েছে- আমাদের গাড়ি গুলো বাড়িতে এনে রাখা হয়। আমরা মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য বলতাম আমাদের বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। প্রকৃত সত্য জানতে পুলিশ, পিবিআই, ডিবি, সিআইডি যে কেউ তদন্ত করে দেখতে পারেন।
জকিগঞ্জ সংবাদ: তোমার চাচা রিয়াজ উদ্দিন কেন তোমার মামা বা তোমাদের পরিবারের উপর অভিযোগ দিচ্ছেন?
জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি: আমার চাচার সাথে এক বছর পূর্বে জায়গা জমি নিয়ে একটু ঝামেলা ছিল। এ কারণে তিনি এভাবে বলছেন।
জকিগঞ্জ সংবাদ: এখন পর্যন্ত তোমাদের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় পুলিশকে কি কোন ক্লু দিতে পেরেছো?
জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি: আমরা অনেক ক্লু দিয়েছি। পুলিশকে আমরা বলেছি- এই এই মানুষগুলোর সাথে আমাদের সমস্যা। এইসব মানুষদের এনে আপনারা জিজ্ঞাসাবাদ করুন। কিন্তু পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের আগেই সন্দেহজনক একজন গত ৩ তারিখে বিদেশে চলে গেছেন এবং বাকি দু’জন আত্মগোপনে চলে গেছেন। আমার চাচা ও চাচি আত্মগোপনে এখন।
জকিগঞ্জ সংবাদ: তোমার বাবার চাচাতো ভাইয়েরা কি আত্মগোপনে?
জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি: জিনা। আমার আপন চাচা রিয়াজ উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী রাবেয়া বেগম আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাঁরা এখন বাড়ি ঘরে নেই। আমি আমার বাবা হত্যার বিচার চাই।
জকিগঞ্জ সংবাদ: আমি সরাসরি একটি ইন্টারভিউ তোমার বা তোমার আম্মার নিতে চাই?
জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি: আমার সামনে পরীক্ষা। আমি এখন ইন্টারভিউ দেয়ার মনমানসিকতা নেই। আর আম্মা তো ইদ্দত পালন করছেন। তাই উনিও কোন ইন্টারভিউ দিবেন না। ১০/১২ দিন পরে আম্মাকে ইন্টারভিউ দিতে বলবো।
জকিগঞ্জ সংবাদ: সুমন যে অংশে থাকেন সে অংশ তোমাদের নাকি সুমনের?
জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি: তিনি যে অংশে থাকেন সে অংশ উনার। তিনি এক বছর পূর্বে আমার বাব্বার নিকট থেকে কিনে নিয়েছেন।
জকিগঞ্জ সংবাদ: সুমন এই জায়গা কত টাকা দিয়ে কিনেছেন এবং এই টাকা কি তোমার বাবাকে দিয়েছেন?
জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি: তিনি ২৫/২৬ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনেছেন এবং আমার আব্বাকে টাকাটা দিয়েছেন।
জকিগঞ্জ সংবাদ: তোমার বাবা সারা জীবন বিদেশ থেকে এবং এত টাকার বাড়ি বিক্রি করে তিনি এখন অন্যের দোকানের সুপারী কেটে ১০০/১৫০ টাকা রোজগার করে চলছেন কেন? এত টাকা তিনি কি করেছেন?
জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি: আমাকে একটু সময় দিন, আমি আপনাদের সব কিছু বলবো।
জকিগঞ্জ সংবাদ: যখন বিষয়টি নিয়ে ধোয়াশা তৈরি হবে তখন বলে কি লাভ হবে? এখন বললে অসুবিধা কি?
জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি: আপনাকে আমি যখন কথা দিয়েছি, সব কিছু আপনাকে বলবো। কত দিয়ে কিনেছেন এবং কিভাবে কিনেছেন। আমি কিছুই গোপন রাখবোনা। আমাকে সময় দিন। আমরা যখন চাচার নিকট থেকে কিনেছি, তখন চাচাকে টাকা দিতে না পারায় মামার নিকট থেকে টাকা এনেছিলাম। পরে মামার টাকা না দিতে পারায় জায়গা দিয়ে দিয়েছি। এ জায়গা নিয়ে কোন ঝামেলা নেই।
জকিগঞ্জ সংবাদ: মামার নিকট কতটুকু জায়গা বিক্রি করেছো?
জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি: আনুমানিক ১৫/১৬ ডিসিমেল জায়গা বিক্রি করেছি। আজান হয়ে যাচ্ছে এখন রাখি।
জকিগঞ্জ সংবাদ: ওকে, আল্লাহ হাফিজ। নামাজ পড়ো।
Leave a Reply