জকিগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জামেয়া ইসলামিয়া ফয়জে আম মুনশীবাজার-এর প্রয়াত শিক্ষকগণের জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা ও দু’আ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২রা জুলাই) বিকাল ৪ ঘটিকা থেকে রাত ৯ ঘটিকা পর্যন্ত জামেয়ার মসজিদে বরেণ্য উলামায়ে কেরাম আলোচনা পেশ করেন।
জামেয়ার সাবেক মুহতামীম খলিফায়ে মাদানী আল্লামা আব্দুল গাফফার শাইখে মামরখানী (রহ.), সদ্য সাবেক মুহতামীম প্রখ্যাত শায়খুল হাদীস আল্লামা মুকাদ্দাস আলী (রহ.) ও মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুল কাইয়্যুম লক্ষীরায়েরচকী (রহ.)-সহ জামেয়ার মরহুম আসাতিজায়ে কেরামগণের মৃত্যুতে আল্লামা শাইখ আবদুল গাফফার (রহ.) ছাত্র সংসদ এ আলোচনা সভা ও দু’আ মাহফিলের আয়োজন করে।
জামেয়ার নাইবে মুহতামিম মাওলানা আব্দুল হান্নান-এর সভাপতিত্বে ও ছাত্রসংসদের সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন ইসমাইল-এর সঞ্চালনায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন জামিয়ার মুহাদ্দিস মাওলানা মুফতি মাহমুদ হুসাইন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামেয়ার প্রধান মুহতামিম মাওলানা শায়খ আব্দুল মুসাব্বির আইয়রী।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, এ জামেয়ার সূচনালগ্ন থেকে যারা অক্লান্ত পরিশ্রমে খেদমত করে আজ পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন-তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন জামেয়ার জন্য নিবেদিত প্রাণ। আল্লাহ’র রাস্তায় তাঁদের জীবনকে উৎসর্গ করে ছাত্রদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন হেদায়েতের আলো। আজ তাঁরা নেই, কিন্তু তাঁদের রেখে যাওয়া আমল ও নিঃস্বার্থ খেদমত আমাদের মাঝে প্রেরণা হয়ে বেঁচে আছে। স্বীয় ছাত্ররা আজও তাঁদের জন্য রূহানী কান্নায় প্রভুর দরবারে মোনাজাত করে। আমরাও যদি নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে দ্বীনি খেদমতে নিয়োজিত থাকতে পারি, তাহলে আমাদের জীবনও হবে সার্থক ও মর্যাদাপূর্ণ।”
তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, শায়খে মামরখানী রহ. ছিলেন এক অনন্য সাধক ও ত্যাগের প্রতীক। মানুষ তাঁকে দিয়েছিল ঘর-বাড়ি নির্মাণের জন্য অর্থ, কিন্তু তিনি তা নিজ প্রয়োজনে খরচ না করে জামেয়ার জন্য নতুন ভবন নির্মাণে ব্যয় করতেন। রাতে হারিকেন জ্বালিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে সংগ্রহ করতেন জামেয়ার জন্য সাহায্য। এমনকি নিজের কাঁধে ধানের বস্তা বহন করে মাদরাসায় নিয়ে আসতেন। তাঁর সেই নির্লোভ ও নিবেদিত চিত্র কর্মমুখর জীবন আমাদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে।
যুক্তরাজ্য থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন জামেয়ার নাইবে মুহতামিম মাওলানা মুফতি আবদুল মুনতাকিম।
তিনি তার বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য প্রয়াত শিক্ষকদের অবদান এবং উত্তরসূরিদের দায়িত্ববোধের কথা গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেন। একই সাথে তিনি সকলকে একযোগে জামেয়ার অগ্রগতিতে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় প্রয়াত আসাতিজায়ে কেরামের স্মৃতি চারণ করে বক্তব্য রাখেন, মেওয়া মাদরাসার শায়খুল হাদীস মাওলানা কামাল আহমদ, বিশিষ্ট রাজনীতিবীদ মাওলানা রেজাউল কারীম জালালী, কাজিরবাজার মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মুফতি সিদ্দিক আহমদ চিশতী, মাওলানা লিয়াকত আলী, মাওলানা রিয়াজুদ্দিন চাপঘাটি, মাওলানা আব্দুল মান্নান, মাওলানা মুফতি রশীদ আহমদ, মাওলানা রশীদ আহমদ, মাওলানা সাখাওয়াত আলী ও মাওলানা জুবায়ের আহমদ প্রমূখ।
বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, এই জামেয়ার মরহুম শিক্ষকগণ শুধু একজন শিক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন না; বরং তাঁরা ছিলেন পথপ্রদর্শক, আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগর। তাঁদের ত্যাগ, শ্রম ও নিষ্ঠা এ প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিকে শক্তিশালী করেছে।
অনুষ্ঠান শেষে সকল প্রয়াত শিক্ষকদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া পরিচালনা করা হয়।
Leave a Reply