সিলেট জেলা শহর থেকে প্রায় একশত কিলোমিটার দূরবর্তী উপজেলা হচ্ছে জকিগঞ্জ। এটি একটি সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় যোগাযোগ ক্ষেত্রে এমনিতেই পিছিয়ে রয়েছে। এ উপজেলার ৫৩ কিলোমিটার জায়গা ভারত সীমান্তের সাথে মিশে আছে। এক দিকে জেলার সবচেয়ে দূরবর্তী উপজেলা, অপরদিকে ভারত সীমান্ত ঘেষা একটি উপজেলা। সব মিলিয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা যুগের পর যুগ থেকে যোগাযোগ ক্ষেত্রে চরম পিছিয়ে রয়েছে।
বিগত কয়েক বছর থেকে এ উপজেলার অভ্যন্তরীণ সব ক’টি সড়ক ভেঙে স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা সড়ক, ইউনিয়ন সড়ক কিংবা গ্রামীণ সড়ক ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। বিগত ২০২২ সালের বন্যার পর থেকে এসব সড়ক একেবারেই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে সড়কগুলোর অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে পড়েছে। সড়কের পিচ ও পাথর উঠে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। কোথাও কোথাও কাদা জমে আছে। প্রথম দেখায় মনেই হয় না এটি সড়ক। এসব স্থানে ভারী যানবাহন চলতে গিয়ে বিকল হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। সড়কগুলো বেহাল হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন জকিগঞ্জ উপজেলার লক্ষ লক্ষ মানুষ।
জকিগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর এমন বেহাল অবস্থার ফলে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, বয়স্ক ও রোগীদের নিয়ে গাড়িতে চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। যাত্রী সাধারণ এসব ভাঙা সড়কে প্রতিনিয়ত চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এসব সড়ক সংস্কারের দাবীতে বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। এসব সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধনে বারবার ভাঙা সড়কগুলো সংস্কারের দাবী উঠলেও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিডি)’র একটুও টনক নড়েনি। বাস্তবধর্মী কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছেনা এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জকিগঞ্জ উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ শেওলা-জকিগঞ্জ সড়ক ও কালিগঞ্জ-জকিগঞ্জ সড়কটি দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ দু’টি সড়ক উপজেলার অভ্যন্তরীণ সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘ সড়ক। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার বলার পরও জনগুরুত্বপূর্ণ এই দু’টি সড়কও সংস্কার হচ্ছে না। বাকি প্রায় অর্ধশতাধিক ইউনিয়ন ও গ্রামীণ রাস্তা-ঘাটের তো নাজুক অবস্থা। এসব রাস্তা সংস্কারের কোন ধরণের উদ্যোগ আজ অবধি পরীলক্ষিত হচ্ছে না। এতে বর্ষাকালে রাস্তাগুলোতে কাদা জমে যায়, যা পায়ে হেঁটে চলাও কঠিন করে তোলে। ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে যাতায়াতে সমস্যায় পড়ে। অসুস্থ ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে সমস্যা হয়। পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে সমস্যা হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যেও ব্যাঘাত ঘটে। ভাঙা রাস্তা ও গর্তের কারণে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে।
আমরা মনে করি, এসব সমস্যার কথা চিন্তা করে জকিগঞ্জের সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। জনদুর্ভোগ কমাতে এবং জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে দ্রুত সড়ক সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরি। তাই উপজেলা ও জেলা এলজিইডি অফিস বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হতে হবে। অন্যতায় সীমান্তবর্তী এ উপজেলার মানুষের কষ্টের শেষ থাকবেনা। মানুষের মধ্যে দিন দিন ক্ষোভের সঞ্চার হবে। যে কোন সময় এনিয়ে চরম আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
আমরা আশা করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অতিদ্রুত জকিগঞ্জ উপজেলার সকল ভাঙা সড়ক দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা করবেন।
Leave a Reply