জকিগঞ্জে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যেন কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। মাদক, চোরাচালান, অনলাইন জুয়া, চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ, অপহরণ, জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের মতো ভয়াবহ অপরাধের পাশাপাশি ক্লুলেস হত্যার ঘটনা দিনদিন বাড়ছে। বাড়ছে ধানক্ষেত, ডুবা ও নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধারের সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে জকিগঞ্জ জুড়েই সাধারণ মানুষ চরম উৎকণ্ঠায়। উদ্বেগ-আতঙ্ক মানুষের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে। দিশেহারা হয়ে মানুষ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে চেয়ে আছে।
চলতি অক্টোবর মাসের ১লা তারিখে জকিগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী নুমান উদ্দিনের লাশ বাড়ির পার্শ্ববর্তী ধানক্ষেত থেকে উদ্ধারের করে পুলিশ। এর দু’দিন আগে তিনি নিখোঁজ হয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জকিগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়রী (জিডি) করেন। তাঁরা দাবি করেন অজ্ঞাত নাম্বার থেকে তাদের নিকট মুক্তিপন দাবি করা হয়েছিল। জিডি করার পরও তাকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। শেষ পর্যন্ত নুমান উদ্দিনের লাশ পাওয়া গেল ধানক্ষেতে। লাশ পাওয়ার পর পাঁচ দিন চলে গেলেও আজও রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। নিহতের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করলেও সাধারণ জনগণের নিকট মামলাটি প্রশ্নবিদ্ধ। সন্দেহজনক আসামি নিহতের শ্যালক সুমনকে মামলায় স্বাক্ষী রেখে আটক দেখালেও এখন পর্যন্ত রিমান্ডে নিয়ে আসা হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ উৎকন্ঠা আরও বেড়ে গেছে।
গত আগস্ট মাসের শুরুতে এভাবেই পরপর দু’টি লাশ ধানক্ষেত ও ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়। তন্মধ্যে ২রা আগস্ট উপজেলার আটগ্রাম বড়বন্দ এলাকার ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয় কানাইঘাট উপজেলার ১নং লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের বড়চাতল গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে বৃদ্ধ মাহমুদ আলীকে। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের ছেলে রেহিম আলী অজ্ঞাতনামা আসামীদের দিয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর প্রায় আড়াই মাস চলে গেলেও আজ পর্যন্ত তাঁর খুনের রহস্য বা কারা খুন করেছে তা জানা যায়নি। আটগ্রাম সুরমা বাজার থেকে সংরক্ষণ করা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশকে সরবরাহ করা হলেও এখন পর্যন্ত খুনিকে শনাক্ত করতে না পারায় হতাশ এলাকার লোকজন। কললিষ্ট এবং কলরেকর্ড পর্যালোচনা করেও খুনিকে চিহ্নিত না করতে পারা সাধারণ মানুষের জন্য হতাশাজনক।
অপরদিকে পাশাপাশি সময়ে গত ৫ আগস্ট জকিগঞ্জ উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের এওলাসার গ্রামের একটি ডোবা থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হলেও আজ অবধি তার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। যে ব্যক্তি মারা গিয়েছে তার পরিচয়ই যখন পাওয়া যাচ্ছে না তখন খুনি কে তা কিভাবে বের হবে। এমনটাই সাধারণ মানুষের প্রশ্ন।
এছাড়াও জকিগঞ্জের রতনগঞ্জে অবস্থিত গোলাম মোস্তফা চৌধুরী একাডেমির অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র মুসরাব হোসেনের অর্ধগলিত লাশ বালাই হাওরের কুছির খালে পাওয়ার দেড় বছর ও জকিগঞ্জ থানার বাবুর্চি আজমল হোসেনের মেয়ে শাম্মি আক্তারের লাশ পৌর শহরের কেছরী গ্রামের একটি জঙ্গলে পাওয়ার দুই বছরের অধিক সময় চলে গেলেও আজ পর্যন্ত হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন হয়নি। কে বা কারা তাদের কি কারণে হত্যা করেছে তা আজও কেউ জানতে পারেননি!
জকিগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষ সাম্প্রতিক সময়ের এসব ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন চায়। জকিগঞ্জ থানা পুলিশ অতিদ্রুত এসব হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করে খুনিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসুন।
Leave a Reply