জকিগঞ্জে শীতের আমেজ বাড়তেই বাজারগুলোতে শীতবস্ত্রের বেচাকেনা জমে উঠেছে। জকিগঞ্জ বাজার, কালিগঞ্জ বাজার, শাহগলি বাজার, বাবুর বাজার, শরীফগঞ্জ বাজার, চৌধুরী বাজার ও ঈদগাহ বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। শীতের শুরুতেই ক্রেতাদের আগমন বাড়ায় ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জকিগঞ্জ বাজারের ফুটপাতের কাপড় বিক্রেতা আহমদ বলেন, “শীত আগেভাগেই অনুভূত হওয়ায় এ বছর শুরু থেকেই ক্রেতাদের চাপ বেশি। ফুটপাতে দাম তুলনামূলক কম থাকায় অনেকেই এখান থেকেই প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র কিনছেন। অন্যদিকে জকিগঞ্জ বাজারের একটি বিপণীবিতানের মালিক শহীদুল ইসলাম জানান, তারা নতুন ডিজাইনের ও মানসম্মত শীতবস্ত্র এনেছেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে অনেক ক্রেতা বিপণীবিতানে আসছেন, ফলে বিক্রি আগের বছরের তুলনায় ভালো হচ্ছে।
জকিগঞ্জ বাজারে শীতের পোশাক কিনতে আসা ক্রেতা কয়েছ আহমদ বলেন, ফুটপাতে দাম কম হলেও মানসম্মত কাপড় পাওয়া যায় না । বিপণীবিতানে মান ভালো কিন্তু দাম তুলনামূলক বেশি। তাই দুই জায়গার পণ্য দেখে তুলনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। অন্যদিকে ক্রেতা জুমা আক্তার জানান, শিশুদের জন্য মানসম্মত পোশাক প্রয়োজন হওয়ায় তিনি বিপণীবিতানের উপরই বেশি ভরসা করেন। তবে সাধারণ কিছু শীতের জিনিস ফুটপাত থেকেই কেনা যায়।
ফুটপাত ও বিপণীবিতানের বেচাকেনায় দামের পার্থক্য বেশ স্পষ্ট। ফুটপাতে দাম কম, দরকষাকষির সুযোগ বেশি এবং নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের আকর্ষণ করে। তবে মান সবসময় একই থাকে না। বিপণীবিতানে দাম তুলনামূলক বেশি হলেও গুণগত মান ও স্থায়িত্ব ভালো, পাশাপাশি নতুন ডিজাইন ও ব্র্যান্ডেড পণ্য পাওয়ার সুযোগ থাকে। ফুটপাতে সাধারণ পণ্যের বৈচিত্র্য বেশি হলেও বিপণীবিতানে বড় কালেকশন এবং পরিবারভিত্তিক কেনাকাটার জন্য উপযোগী পরিবেশ থাকে। এছাড়া বিপণীবিতানে ট্রায়াল রুম, এক্সচেঞ্জ সুবিধা ও রিসিট প্রদানের মতো সেবা পাওয়া গেলেও ফুটপাতে এসব সুবিধা নেই।
পৌরসভার আল মজিদ শপিং কমপ্লেক্সে কবির আহমদ নামক জনৈক ক্রেতাকে শীতবস্ত্র কিনতে গিয়ে অনেকক্ষণ দরদাম করতে দেখা যায়। অবশেষে নিজের পছন্দের শীতবস্ত্রটি কিনতে না পেরে বেরিয়ে এলে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “শীতবস্ত্র কোনো বিলাস দ্রব্য নয়। তারপরও এত অগ্নিমূল্য! ভাবছি ফুটপাত থেকেই ভালো চেয়ে একটি শীতবস্ত্র কিনে নিব।”
কালিগঞ্জের গিয়ে দেখা যায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য! নিজের শিশু সন্তানকে হাতে ধরে শীতবস্ত্র কিনতে এসেছেন এক ভদ্রমহিলা। নিতান্তই অভাবী এই মহিলা একটি সোয়েটার কিনতে গিয়ে টাকার অভাবে ফিরে যাচ্ছিলেন। তখন আবু তালহা নামক জনৈক মাদ্রাসা শিক্ষক ১২০ টাকা দিয়ে তাকে এটা কিনে দেন।
এদিকে পুরো উপজেলাজুড়ে শীত জেঁকে বসলেও অন্যান্য বছরের ন্যায় ব্যক্তিগত কিংবা সাংগঠনিকভাবে অসহায় মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র প্রদানের তেমন কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। স্বামী পরিত্যক্তা দুই সন্তানের জননী খায়রুন নাহার বলেন, “প্রতিবছর বিভিন্নজনের কাছ থেকে শীতবস্ত্র উপহার পেলেও এ বছর বোধহয় শীতেই মরতে হবে। এখনো কারো পক্ষ থেকে একটিও শীতবস্ত্র পাইনি। ”
শীত যত বাড়ছে অসহায় মানুষের হাপিত্যেশ তত বাড়ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা আছেন ফুরফুরে মেজাজে। শাহগলী বাজারের কাপড় বিক্রেতা নাহিয়ান বলেন, ” শীত যত বাড়বে ততই ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আশা করছি, এই মওসুমে ভালো টাকা উপার্জন করতে পারবো।”
Leave a Reply