সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। কুশিয়ারা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে এবং বাঁধ উপচে পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। কুশিয়ারা নদীর ডাইক রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেল পর্যন্ত উপজেলা ৫টি ইউনিয়নের ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। নিজের বাড়ি ঘর ছেড়ে সোমবার পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজন যেতে না চাইলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেছে ভুক্তভোগী অনেক পরিবার। তবে এখন পর্যন্ত বেশীরভাগ পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে না উঠে নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান নেয়ার খবর পাওয়া গেছে। সরকারিভাবে ঘোষিত ৫৭টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল এলাকায় বেশ কয়েকটি পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে ঢুকেছেন। পানিবন্দি বাকি এলাকার লোকজন এখনো নিজেদের ঘরের মালামাল, আসবাবপত্র ও গবাদিপশু ফেলে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে চাচ্ছেন না। তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আজকের মধ্যে শতশত পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে পারেন বলে এলাকাবাসী মনে করেন।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে জকিগঞ্জে বৃষ্টিপাত কিছুটা বন্ধ হলেও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল সোমবারের চেয়েও প্রবল বেগে নামছে। ফলে সোমবার ভেঙে যাওয়া ৩টি বেড়িবাঁধ ছাড়াও মঙ্গলবার ভোর থেকে নতুন করে খলাছড়া ইউনিয়নের ভুইয়ারমুড়া, সুলতানপুর ইউনিয়নের ইছাপুর, রহিমপুর, বীরশ্রী ইউনিয়নের মাঝরগ্রাম হয়ে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে। নতুন করে সৃষ্টি হওয়া এসব ভাঙন ও উপচে পড়া পানি প্রতিরোধে স্থানীয় এলাকাবাসী প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় কিছু কিছু এলাকায় পানি আটকানো গেলেও ঝুঁকিতে রয়েছেন এলাকাবাসী।
এদিকে জকিগঞ্জ পৌরসভার কেছরী ও মাইজকান্দি এলাকায় বাঁধ উপচে আসা কুশিয়ারা নদীর পানি স্থানীয় লোকজনের প্রচেষ্টায় বন্ধ হয়েছে। এ দু’টি স্থান দিয়ে পানি আসা বন্ধ হওয়ায় জকিগঞ্জ শহর থেকে পানি নেমে গিয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই, বাখরশাল, মানিকপুর, মুমিনপুর, ভরণ সুলতানপুর, ছবরিয়া, শস্যকুড়ি, হাইল ইসলামপুর, আনারশী, রহিমখারচক, হোসনাবাদ, কান্দিগ্রাম, গদিরাশী, গুলাখাই, সেনাপতিরচক, খলাছড়া ইউনিয়নে ঈদগাহ বাজার, লোহারমহল, কাপনা, শেখপাড়া, ধলিগাঁও, গাগলাজুর, জালালপুর, ইসলামপুর, ষাটশৌলা, সুলতানপুর ইউনিয়নের ইছাপুর, রহিমপুর, পাঠানচক, সখড়া, ফলাহাট, ইলাবাজ, শিতলজুড়া, সাতঘরি,ভক্তিপুর, সহিদাবাদ, আনন্দপুর, বীরশ্রী ইউনিয়নের সুপ্রাকান্দি, মাঝরগ্রাম, লাফাকোনা, পশ্চিম জামডহর, উজিরপুর ও ঈদগাহ বাজার এলাকাসহ কাজলসার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে নতুন করে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জকিগঞ্জের দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান ভূইয়া জকিগঞ্জ সংবাদকে জানান, সোমবার কুশিয়ারা নদীতে বিপদসীমার ১৮৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও মঙ্গলবার বিপদসীমার ১৯৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। চলমান পরিস্থিতিতে নদীর পানি আটকানোর জন্য বস্তা দেয়া ছাড়া আর কোন সুযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাতে নেই। যে এলাকা থেকে বস্তা চাওয়া হচ্ছে আমরা সে এলাকায় বস্তা দিয়ে সহযোগিতা করছি। পানি নেমে গেলে বাঁধ মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ মাহবুবুর রহমান জকিগঞ্জ সংবাদকে জানান, বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে কুশিয়ারা নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে ইতিমধ্যে ৫টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে ভুক্তভোগী মানুষ উঠতে শুরু করেছেন। সরকারিভাবে প্রাপ্ত ২৪ টন চাল বন্যা আক্রান্ত মানুষের জন্য বন্টন করা হয়েছে।
Leave a Reply