সিলেট জেলা শহর থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট দুই উপজেলার সড়ক সংস্কার, নদী ভাঙ্গন, স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষার উন্নয়নে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি ও চাকসুর সাবেক আপ্যয়ন সম্পাদক মামুনুর রশীদ। রোববার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে সিলেট নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে জকিগঞ্জ-কানাইঘাট বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠন আয়োজিত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে, আগামী ৫ মে সকাল ১১টায় সিলেট মহানগরীর ঐতিহাসিক কোর্ট পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট বিএনপি আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে এদিন সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হবে। পরদিন ৬ মে থেকে মাসব্যাপি দুই উপজেলায় গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করা হবে। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যেও যদি সরকারের টনক না নড়ে এবং দৃশ্যমান কোনো প্রক্রিয়া না দেখা গেলে আরো কঠোর আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রয়োজনে জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট থেকে সর্বস্তরের মানুষ নিয়ে আগামী ১৮ জুন সিলেট এলজিইডি ভবন ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এরপরও যদি ফলাফল না আসে তখন, দুই উপজেলার বিএনপি নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনগণ নিয়ে আরো কঠোর কর্মসূচি নেয়া হবে।
লিখিত বক্তব্যে মামুনুর রশীদ জানান, সিলেটের সীমান্তবর্তী দুই উপজেলায় গত ১৭ বছরে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। যার কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত এ অঞ্চলের মানুষ। সম্প্রতি যোগাযোগ ব্যবস্থার এতটাই বেহালদশা যে সড়কগুলোতে গাড়ি চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। প্রত্যেকটি রাস্তা ভেঙ্গে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সাধারণ মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে দ্রুত সড়ক মেরামতের দাবিতে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতেও যোগাযোগ করেছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে জনদুর্ভোগ নিরসনে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, জকিগঞ্জ-কানাইঘাট উপজেলার সুরমা, কুশিয়ারা ও লোভা নদীর ভাঙ্গনে ফসলী জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, রাস্তাঘাট ও বসতভিটা হুমকির সম্মুখীন রয়েছে। ইতোপূর্বে নদীভাঙ্গনে এই দুই উপজেলার মানুষ অনেক কিছু নদীগর্ভে হারিয়েছেন। এমতাবস্থায় নদীভাঙ্গন রোধে ব্লক বসানো যেমন প্রয়োজন তেমনি নদীর দু’তীরের অরক্ষিত অংশগুলোতে নতুন করে বাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি পুরাতন বাঁধগুলো মেরামত এখন সময়ের দাবি। তিনি আরো জানান, প্রায় ৩/৪ মাস আগে জকিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সুরমা ও কুশিয়ারা ডাইক নির্মাণের সময় ভারতের বিএসএফ‘র বাধায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত ২/৩টি স্থান ছাড়া ওই এলাকায় আর বাঁধ নির্মাণ হয়নি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিএসএফ’র এ ধরনের বাঁধা ভারতের আগ্রাসনের বহি:প্রকাশ। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভারতকে কড়া প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি পুনরায় বাঁধ নির্মাণের কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিজিবিকে আহবান জানান। মতবিনিময় সভায় তিনি অভিযোগ করে বলেন, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটের কয়েকটি এলাকা চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মাদক ও চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম বেড়ে গেছে। কিছুতেই এসব বন্ধ হচ্ছে না। যার কারণে এলাকায় দিন দিন অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। চোরাচালানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
মতবিনিময়কালে কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আশিক উদ্দিন চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়ছল, জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান, কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশীদ, সিনিয়র সহ সভাপতি আব্বাস উদ্দিন চেয়ারম্যান, সহ সভাপতি ডা. আব্দুস শহীদ শিকদার, কানাইঘাট উপজেলার ৮নং ঝিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বকর, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও পৌর কাউন্সিলর রিপন আহমদ, জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমদ, কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খসরুজ্জামান পারভেজ, জকিগঞ্জ পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুস শাকুর ও জকিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর শামীম আহমদসহ জকিগঞ্জ-কানাইঘাট বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply