দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর আইনী লড়াই শেষে মামলায় বিজয়ী হয়ে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসাবে বাংলাদেশ সরকারের গেজেটভুক্ত হলেন বিএনপি নেতা হাসান আহমদ।
গত রোববার (১৩ জুলাই) বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সচিবালয়ের প্রশাসন শাখা সংশোধনী বিজ্ঞাপন হিসেবে তা প্রকাশ করেছে।
নির্বাচন কমিশনের আদেশক্রমে নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা’র উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) তা সংশোধনী আকারে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিজ্ঞ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, সদর, সিলেট-এর দায়েরকৃত নির্বাচনী মামলা নং ০২/২০২২ এর ২৯ মে-২০২৫ তারিখের আদেশে সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে নির্বাচিত প্রার্থী মোঃ আফতাব আহমদ-এর নাম বাতিলপূর্বক প্রার্থী হাসান আহমদ-কে নির্বাচিত ঘোষণা করায় তাঁর দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র অনুসারে নির্বাচন কমিশন এতদ্বারা গত ০১ ফেব্রুয়ারি-২০২২ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যার ৩৪৪৩ নং পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ১নং কলামে বর্ণিত “জকিগঞ্জ” এর বিপরীতে ২নং কলামে বর্ণিত “মোঃ আফতাব আহমদ, মোঃ ছিদ্দিক আলী, শষ্যকুড়ি, সরিষাকুড়ি”-এর পরিবর্তে “মোঃ হাসান আহমদ, পিতাঃ আব্দুল লতিফ, গ্রাম: বাখরশাল এবং ৩নং কলামে বর্ণিত “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ”-এর পরিবর্তে “স্বতন্ত্র” শব্দ ও চিহ্নসমূহ প্রতিস্থাপন করা হলো।
এদিকে এই সংশোধিত গেজেট প্রকাশের মধ্যদিয়ে নির্বাচনের প্রায় সাড়ে ৩ বছর পর জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হচ্ছেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপি নেতা হাসান আহমদ।
জানা যায়, চলতি বছরের ২৯ মে বৃহস্পতিবার জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসাবে হাসান আহমদকে ৭৮ ভোটে বিজয়ী বলে রায় প্রদান করেছে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, সদর, সিলেট। এ ইউনিয়নে ২০২২ সালের ৫ই জানুয়ারী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটগ্রহণ শেষে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আফতাব আহমদ-কে ৩ হাজার ১৩৭টি ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ফলাফলে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা হাসান আহমদ ২ হাজার ৯৭৮টি ভোট পেয়েছেন বলে জানানো হয়। বিজয়ী ও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে ১৫৯ ভোটের ব্যবধান দেখানো হলে তাৎক্ষণিক ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ করেন হাসান আহমদ। তিনি ভোট পুনঃগণনার জন্য আবেদন করেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শাদমান সাকীবের কাছে। কিন্তু পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর অভিযোগ পাওয়ার পরও রিটার্নিং কর্মকর্তা তা আমলে নেননি। কোন প্রতিকার না পেয়ে হাসান আহমদ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, সিলেটে ৭টি কেন্দ্রে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন।
আদালত দীর্ঘ শুনানি ও ভোট গণনা করে চেয়ারম্যান আফতাব আহমদ থেকে ৭৮টি ভোট বেশী ভোট পাওয়ায় নিকতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপি নেতা হাসান আহমদকে বিজয়ী বলে রায় প্রদান করেন। সেই রায়ের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ গেজেটে সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি’র মাধ্যমে চেয়ারম্যান আফতাব আহমদের স্থলে হাসান আহমদের নাম উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আদালতের রায়ে বিজয়ী প্রার্থী হাসান আহমদ বলেন, জনগণ আমাকে ভোট দিয়েছিল, কিন্তু কারচুপি ও জালিয়াতির মাধ্যমে আমার ফলাফল ছিনিয়ে নেয়া হয়। আদালত ভোটগণনা শেষে চেয়ারম্যান আফতাব আহমদ থেকে ৭৮ টি ভোট আমি বেশী পাওয়ায় আমাকে নির্বাচিত করেছেন। আদালতে আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি। বর্তমানে আমার নাম বাংলাদেশ গেজেটে সংশোধনীর মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করায় আমি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নিকট কৃতজ্ঞ।
আমার এ বিজয় শুধু আমার একার নয়, এ বিজয় পুরো জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নবাসীর। বাকি অল্পদিনে আমি যেন সকলের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি সে জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
Leave a Reply