খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল হক বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার অধিকাংশ বিরোধী দলের ন্যায্য দাবীকে শুধু উপেক্ষাই করছেনা, বরং সরকারী দল বিরোধীদের কর্মসূচীর পাল্টা কর্মসূচী দিয়ে দেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীও তাদের সহ্য হয়না। সরকারী দলের কোন কোন নেতা সন্ত্রাসীদের ভাষায় কথা বলছেন। যা অপরাজনীতির জন্য শুভনীয় হলেও সুস্থ ধারার রাজনীতির জন্য অশুভ সংকেত দিচ্ছে।’
তিনি সরকারি দলকে উদ্দেশ্য করে বলেন,’ দেশের রাজনীতিকে সংঘাতের দিকে না নিয়ে, প্রিয় মাতৃভূমিকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে না দিয়ে সময় থাকতে সমঝোতার পথে আসুন। বিরোধী দলের ন্যায্য দাবীর প্রতি মনোযোগ দিন। অহেতুক কালক্ষেপন করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার দুরভিসন্ধি পরিহার করুন। আপনাদের অক্ষমতার সুযোগে বিদেশীরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবার সুযোগ পাচ্ছে। বিরোধী পক্ষের ন্যায্য দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে অবিলম্বে সমঝোতায় বসুন। বিদেশীদেরকে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা-সার্ভৌমত্বে আঘাত করতে দেবেননা।’
তিনি রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে খেলাফত মজলিস জকিগঞ্জ উপজেলা ও পৌর শাখার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত গণ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি রোধ ও কারাবন্দী আলেম-উলামা এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও সকল রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার সহ কেন্দ্র ঘোষিত ৮ দফা দাবীতে দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্থানীয় এমএ হক চত্বরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
খেলাফত মজলিস জকিগঞ্জ উপজেলা সভাপতি শায়খ মাওলানা আবদুল মুছাব্বিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, দলের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, সিলেট জেলা সহ সভাপতি মাওলানা মুখলিছুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দিলওয়ার হোসাইন ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস সিলেট পূর্ব জেলা সভাপতি রুহুল আমীন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ মুনতাসির আলী বলেন, ‘সরকারের ছত্রছায়ায় এদেশে কতিপয় মজুদদার সিন্ডিকেট বাজারে অস্বাভাবিক পণ্যমূল্যের জন্য দায়ী। চাল, ডাল, তৈল, আটা, গ্যাস, বিদ্যুৎ;এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে এই সিন্ডিকেটের হাত নেই। যাদের কাছে গোটা জাতি আজ জিম্মি।’
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ সেক্টরে কুইক রেন্টাল দুর্নীতির কুফল আজ জাতি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে সরকারদলীয় লোকজনের কোম্পানি এদেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করার সুযোগ পাচ্ছে। জনগণের অর্থ থেকে ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে তারা সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। অথচ এসব কোম্পানি দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ টুকু করছেনা। এভাবে দেশের প্রতিটা সেক্টর থেকে এরা লুটে-পুটে খাচ্ছে। শেয়ার বাজার, ব্যাংক-বাণিজ্য কোন সেক্টর নেই, যেখানে ওরা লোটপাটের চিহ্ন রাখেনি?’
তিনি আরো বলেন,’ এসব লুটেরা-দুর্নীতিবাজদের হটিয়ে দেশে ন্যায়-ইনসাফের রাজ কায়েম করতে হবে। সে লক্ষেই খেলাফত মজলিসের রাজনীতি। আগামী ১৪ অক্টোবর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে আগামী দিনের জাতীয় মুক্তির দিকনির্দেশনা ও কর্মসূচী ঘোষণা করবে খেলাফত মজলিস। তাই এ সমাবেশ জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। সেই সমাবেশে জকিগঞ্জ বাসীর স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ কামনা করছি। ‘
উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আলাউদ্দিন তাপাদার, পৌর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবদুল হামিদ জালালের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, শ্রমিক মজলিসের সিলেট জেলা সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ূম, ইসলামী যুব মজলিস সিলেট জেলা সদস্য সচিব হাফিজ মাওলানা জারির হোসাইন, খেলাফত মজলিস সিলেট জেলা নির্বাহী সদস্য মাওলানা আবদুস সালাম, উপজেলা সহ সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুল আহাদ, মাওলানা আবদুল করীম, হাফিজ আবদুল হালিম, আবুল কালাম আজাদ ও মাওলানা আবদুল কাদির প্রমূখ।
সমাবেশে জকিগঞ্জ-শেওলা রোড এবং সিলেট-বুরহান উদ্দিন রোড আশু সংস্কারের জোর দাবী জানানো হয়।
Leave a Reply