সিলেটের জকিগঞ্জে সদ্য প্রতিষ্ঠিত “ফাহিম আল ইসহাক চৌধুরী ট্রাস্ট’-এর মেধাবৃত্তি পরীক্ষা জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট প্রতিবেশী দুই উপজেলার সচেতন মহলে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। গত ২ নভেম্বর ট্রাস্টের মেধাবৃত্তি পরীক্ষা আয়োজনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার পর এই দুই উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আলোচিত এ মেধাবৃত্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেন সমূহে প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
গত ১৫ ও ১৭ ডিসেম্বর পৃথক দুইদিনে ফাহিম আল ইসহাক চৌধুরী ট্রাস্টের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের মেধাবৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে এতে দুই উপজেলার দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানের দুই হাজারের অধিক শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করেন।
জকিগঞ্জ-কানাইঘাট দুই উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত মৌলভী ছাইর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে রবি ও মঙ্গলবার সকাল ১১ ঘটিকা থেকে বিকাল ২ ঘটিকা পর্যন্ত পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর মেধাবৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৬৯টি স্কুল, মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেনের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর ১ হাজার ১৪৭ জন মেধাবী শিক্ষার্থী এবং প্রাথমিক পর্যায়ের ১৬৩টি স্কুল, মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেনের পঞ্চম শ্রেণীর ৯৪৩ জন শিক্ষার্থী মেধাবৃত্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় মিলে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত মেধাবৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ২ হাজার ১০০ জন মেধাবী শিক্ষার্থী। মেধাবৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী থেকে বাছাই করে ৩টি গ্রেডে ৫০০টি বৃত্তি প্রদান করা হবে। বৃত্তির অর্থ হিসেবে মেধা গ্রেডে ২ হাজার ৫০০ টাকা, প্রথম গ্রেডে ২ হাজার টাকা এবং সাধারণ গ্রেডে ১ হাজার ৫০০ টাকা এককালীন প্রদান করা হবে। একই সাথে উত্তীর্ণ সকল শিক্ষার্থী সনদপত্রও প্রদান করা হবে। অন্যদিকে মেধাবৃত্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষে স্কুল ব্যাগ, কলম, খাবার এবং অন্যান্য উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়। ব্যতিক্রমধর্মী এমন ব্যবস্থাপনার জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ছাড়া উপস্থিত শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে আনন্দ ও উৎসাহ পরীলক্ষিত হয়। আগামী ৩১শে জানুয়ারী এই মেধাবৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বৃত্তি বিতরণী অনুষ্ঠান করবেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ফাহিম আল ইসহাক চৌধুরী ট্রাস্টের মেধাবৃত্তি পরীক্ষা উপলক্ষে জকিগঞ্জ উপজেলার মৌলভী ছাইর আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের এক পাঁশে বিশাল প্যান্ডেল করে শিক্ষক ও অভিভাবকদের বসার স্থান ও স্কুলের ভিতরে অত্যন্ত সৃশৃঙ্খলভাবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাতিক্রমধর্মী এমন আয়োজন দেখে সাধুবাদ জানান পরিক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন মহল। বৃত্তি পরিক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না, জকিগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ এমদাদুল হক, সিলেট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ কুতুব উদ্দিন, জকিগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’র সভাপতি ও ট্রাস্টের সচিব শাব্বীর আহমদ, ফাহিম আল ইসহাক চৌধুরী ট্রাস্টের সহ সভাপতি সমাজসেবী এটিএম সেলিম চৌধুরী, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহিউদ্দীন হায়দার, জকিগঞ্জ উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি’র সভাপতি আব্দুস শহীদ তাপাদার, উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল খালিক, সমাজসেবী ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী ও তোফায়েল আহমদ চৌধুরী সহ শিক্ষক ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
ফাহিম আল ইসহাক চৌধুরী ট্রাস্টের সচিব প্রধান শিক্ষক শাব্বীর আহমদ বলেন, দানবীর ফাহিম আল ইসহাক চৌধুরী ধর্ম-কর্ম, শিক্ষা, সমাজকল্যাণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও মানবিক যে সকল কাজ ইতিমধ্যে করেছেন তা সর্ব মহলে প্রশংসনীয়। এই ট্রাস্টে অল্পদিন পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত মেধাবৃত্তি পরীক্ষায় ব্যাপক অংশ গ্রহণ দেখে মনে হচ্ছে এটি অনেক পূরাতন একটি ট্রাস্ট।
তিনি আরও বলেন, “এই বৃত্তি কার্যক্রম মেধাবী শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি তাদের প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করবে। তাদের উচ্চ শিক্ষার অভিযাত্রাকে আরও সুদৃঢ় করবে। এছাড়াও এলাকার শিক্ষার প্রসারে ট্রাস্টকে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। শিক্ষার প্রসার, দারিদ্র্য বিমোচন এবং মানবিক সেবার মাধ্যমে জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের সর্বসাধারণের কল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ‘ফাহিম আল ইসহাক চৌধুরী ট্রাস্ট’ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই উদ্যোগ এলাকাবাসীর জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এবং একটি সমৃদ্ধ ও মানবিক সমাজ গঠনে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলেও তিনি জানান।
Leave a Reply