1. admin@zakiganjsangbad.com : admin :
মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

ব্যবসায়ী নুমান উদ্দিন হত্যার ঘটনায় অবশেষে মূখ খুললেন স্ত্রী মনোয়ারা বেগম

মোহাম্মদ মাহবুবুল করিম
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী নুমান উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের দুই মাস পার হলেও এখনও প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রকৃত আসামিদের সনাক্ত বা গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। এই অবস্থায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবিতে স্ত্রী, সন্তান ও বোন সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
রোববার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে জকিগঞ্জ উপজেলার ৯নং মানিকপুর ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে জকিগঞ্জে কর্মরত সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এ সংবাদ সম্মেলন করে নিহতের পরিবার।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, ধর্মীয় রীতিনীতি ও প্রশাসনের বাঁধার কারণে তিনি এতদিন মিডিয়ার সামনে আসতে পারেননি। এ সুবাদে অনেক তাঁর নিজের এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এতদিন তাদের আশা ছিল, প্রকৃত সত্যটা প্রকাশ হয়ে গেলে জনগণ বাস্তব বিষয়টি জেনে যাবেন। কিন্তু তাঁর স্বামীর লাশ পাওয়ার পর দুইমাস চলে গেলেও এখন পর্যন্ত তাঁরা প্রকৃত সত্যটা জানতে পারেননি। তাঁর স্বামীকে কে বা কারা? কেন? কখন? কোথায়? কিভাবে হত্যা করেছে? তা এখনো তাঁরাসহ কেউ জানতে পারেননি। এ ঘটনায় তাঁর ভাই সুমনকে পুলিশ গ্রেফতার করে রিমান্ড দিয়ে কি পেয়েছে তাও তাঁরা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি! সুমন তাঁর স্বামীকে হত্যা করলে কেন করেছে? কোথায় করেছে? কিভাবে করেছে? তা পুলিশ এখন পর্যন্ত জানায় নি। সুমন করে থাকলে কারা কারা জড়িত ছিল এবং জড়িত থাকার কি প্রমাণ পুলিশের নিকট রয়েছে তা তাঁরা জানতে পারেনি।
মনোয়ারা বেগম লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলেন- পুলিশ তদন্তে কি পেয়েছে তা স্পষ্ট উল্লেখ না করে বরং পুলিশ কাল্পনিকভাবে তাঁর স্বামীর টাকা পয়সা ও জায়গা জমি নিয়ে সুমনের সাথে বিরোধ রয়েছে বলে কোর্টে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। যার কোন সত্যতা তিনি আজ অবধি খোঁজে পাইনি। তিনি জানান- তাঁর স্বামীর টাকা পয়সা তাঁর একাউন্টে আসতো। যার প্রমাণ তাঁর নিকট রয়েছে। এছাড়াও জায়গা নিয়ে কোন দিন তাঁর স্বামীর সাথে সুমনের বিরোধ সৃষ্টি হয়নি। কেউ কোন দিন বলতে পারবেনা যে, তাঁর স্বামী ও সুমনের বিরোধ মিমাংসা করার জন্য বিচার বৈঠক এসেছেন। তাঁর দেবর রিয়াজ উদ্দিনের অংশ ক্রয় করার সময় তাঁর স্বামীর নিকট পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় সুমনের নিকট থেকে এবং অন্যান্য লোকজনের নিকট থেকে টাকা ধার কর্জ করে জায়গা ক্রয় করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তাঁর ভাই সুমনের পাওনা টাকা ও ধার কর্জের টাকা তাঁর স্বামী পরিশোধ করতে না পারায় রিয়াজের সেই অংশ তাঁর স্বামী সুমনের নিকট উচিত দামে বিক্রি করে দেন। এ জায়গা নিয়ে তাদের পরিবারে কোন বিরোধ কখনো সৃষ্টি হয়নি। অথচ এখন তাঁর কিছু আত্মীয় স্বজন অযথা প্রচার করছেন- সুমন নাকি জায়গা নেয়ার জন্য তাঁর স্বামীকে খুন করেছে! বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও পরিকল্পিত বলে দাবি করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে মনোয়ারা বেগম আরও জানান, তাঁর স্বামী নুমান উদ্দিন গত ২৯ সেপ্টেম্বর-২০২৫ ইংরেজি সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে দোকান খোলার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে তিনি তাকে ফোন করে জানতে চান, “গ্যাস সিলিন্ডার আনবেন কিনা?” তিনি উত্তর দেন, “দুপুরে বাসায় ফেরার সময় নিয়ে এসো।” দুপুরে খাওয়ার পর তাকে নিয়ে তিনি সিলেট যাওয়ার কথা ছিল। কারণ ৩০ সেপ্টেম্বর তাকে এবং তাঁর স্বামীকে বিবাদী করে দায়েরী স্বত্ব বাটোয়ারা মামলা (মামলা নং ৮/২৫) শুনানির তারিখ নির্ধারিত ছিল। তাঁর স্বামী কালিগঞ্জ বাজারে যাওয়ার পর দুপুর ১২টার পর থেকে উনার মোবাইলে ফোন দিলে রিং হয় কিন্তু রিসিভ হয়না। বারবার চেষ্টা করেও কোনো যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। দুপুর আনুমানিক ২টা ৩০ মিনিটে তাঁর স্বামীর আপন বোনের ছেলে ভাগনা তাজুল ইসলাম দোকানে গিয়ে দেখেন- দোকানের সাটার খোলা, কিন্তু আমার স্বামী নেই, এবং তাঁর ফোন অন্য এক দোকানে চার্জে রাখা। এরপর থেকে তাঁরা প্রায় সকল আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোন সন্ধান না পেয়ে ওইদিন বিকেলে তাঁর মেয়ে, ভাই ও ভাগনা সহ বিভিন্ন লোকজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘নিখোঁজ’ সংক্রান্ত পোস্ট দিয়ে চারিদিকে খোঁজাখুজি শুরু করেন। নিখোঁজের দিন রাত আনুমানিক ৯টার দিকে তুহিন নামে এক ছেলে জানায়, তাঁর স্বামী নুমান উদ্দিনকে সকাল ১১টার দিকে শায়লা স্মৃতি হাসপাতালে সামনের মাঠে দেখেছে এবং তাঁর সঙ্গে ভালো মন্দ কথাও হয়েছে। এ সময় তুহিনের সঙ্গে হাসপাতালের সামনে কলোনির আরও দুই শিশু ছিল যারা একই তথ্য তাদের দিয়েছে। নিখোঁজের দিন ২৯ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে তাঁর ভাই মাজেদ আহমেদ ও হানিফ উদ্দিন সুমনের ইমো নাম্বারে একটি বার্তা আসে। তাতে লিখা ছিল-
“নুমানকে পেতে হলে ২ লক্ষ টাকা দিতে হবে, না দিলে দোকান জ্বালিয়ে দেব।”এই বার্তার স্কীন রেকর্ড তাদের নিকট রয়েছে। পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ৭ টা ৪২ মিনিটে ০১৯৬০-৭১৮৩৪০ নাম্বার থেকে তাঁর ভাই হানিফ উদ্দিন সুমনের মোবাইল নাম্বার ০১৭১৫৪৬৬৯০২ মোবাইলে কল আসে এবং ২০ মিনিটের মধ্যে ১ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
এ ধরনের একের পর এক মুক্তিপণের ফোন পেয়েই তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে জকিগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে যান এবং তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। জকিগঞ্জ থানার জিডি নং ১২৬২, তারিখ-৩০/০৯/২০২৫ খ্রিস্টাব্দ। কিন্তু পুলিশ ফোন নাম্বার ট্র্যাকিং করে তাদেরকে বলে এগুলো প্রতারক। পুলিশ এত বড় একটি খুনের ঘটনায় মুক্তিপন দাবিকারী লোকটিকে শুধুমাত্র ‘প্রতারক’ বলে পরিচয় বের না করে এমনিতে উড়িয়ে দেয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত?
পুলিশ চাইলে ও তো এই মুক্তিপণ দাবি কারিকে ধরতে পারতো? কিন্তু পুলিশ কেনো ধরে না?
এছাড়াও গত ২৮ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে তাঁর স্বামী বাজার থেকে আসার পথে রাজমহলের পাশে ব্রিজের উপর বদরুল হক (বুদুর) তাঁর স্বামীর হাতে ধরে বলে নাজিরের দোকান থেকে আমাকে পান সিগারেট খাওয়াও। তখন ওই দোকান থেকে তাঁর স্বামী একটি পাউরুটি কিনা নিয়ে কাটাকাটি হয় এবং তাকে মিথ্যে একটা চুরির অপবাদ দেয়া হয়। কথা ছিল এই চুরির অপবাদের বিচার হবে ২৯ তারিখ সকাল বেলা। আবার ওই রাতেই বদরুল ফোন দিয়ে বলে ওই বিষয়টা নাকি শেষ হয়ে গেছে। তাঁর স্বামীর কথা ছিলো তিনি বাড়িতে থাকাবস্থায় ওই বিচার কিভাবে শেষ হয়?
লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, যাদের সাথে তাদের জায়গা নিয়ে মামলা তারা তাঁর স্বামীকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধমকি দিতো এবং ২০২৪ সালে তারা দুই দুইবার তাঁর স্বামীকে মারপিট করেছে। শেষ পর্যন্ত তাঁর স্বামীকে তার চাচাতো ভাই আল আমিন ওই জায়গা জমিন নিয়ে বাজারে জুতো দিয়ে মেরেছিল। ১লা অক্টোবর তাঁর স্বামীর লাশের খবর তেরা মিয়া এসে দেয়ার পর পরিবারের লোকজন ধান ক্ষেতে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। এরপর তাঁর স্বামীর লাশ ধান ক্ষেতে থাকা অবস্থায় তাদের বাড়িতে এসে দেবর রিয়াজ এবং চাচাতো ভাই জামিল, কবির ও আল আমিনসহ অনেকে এসে হামলা করে এবং তাদের উপর হামলার চেষ্টা করে। এরপর থেকে তাঁরা বিভিন্নভাবে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মনোয়ারা বেগম তাঁর স্বামী হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ ও নির্ভুল তদন্ত নিশ্চিত, পিবিআই বা সিআইডির মাধ্যমে তদন্ত পরিচালনা করা, অতিদ্রুত মুক্তিপণ দাবী করা মানুষকে ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসা, জড়িত সকল অপরাধীকে দ্রুত শনাক্ত করে আইনের নিয়ে আসা এবং ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের হয়রানি বন্ধ করার জোর দাবী জানান।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
জকিগঞ্জ সংবাদ-এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
প্রতিষ্ঠাতা: রহমত আলী হেলালী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায় সিসা হোস্ট