সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) সংসদীয় আসনে দেয়াল ঘড়ি প্রতীকে খেলাফত মজলিসের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে হাফিজ মাওলানা মুফতি আবুল হাসানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৪টায় সিলেট নগরীর একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স হলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের খেলাফত মজলিস মনোনীত সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীদের এক মতবিনিময় সভা শেষে তার নাম ঘোষণা করা হয়।
প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব, ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আমীরে মজলিস মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, নায়েবে আমীর মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, ডা. এ এ তাওসিফ ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ।
জানা যায়, হাফিজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আবুল হাসান ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ অক্টোবর সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলাধীন ২নং বীরশ্রী ইউনিয়নের মাঝর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ এবং মাতা মোছাম্মৎ আছারুন বিবি। বর্তমানে তিনি সিলেটের জকিগঞ্জস্থ লামারগ্রামে অবস্থিত জামেয়া ইসলামিয়া দারুসুন্নাহ মোহাম্মদিয়া এর মুফতি ও শায়খুল হাদিস এবং জকিগঞ্জ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব।
মুফতি মোহাম্মদ আবুল হাসান ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে হিফজুল কোরান পরীক্ষায় আজাদ দ্বীনি এবারায়ে তা’লিম বাংলাদেশের অধীনে সম্মিলীত মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান লাভ করেন। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ছাফেলা (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় আজাদ দ্বীনি এবারায়ে তা’লিম এর অধীনে প্রথম বিভাগ লাভ করেন। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আজাদ দ্বীনি এবারায়ে তা’লিম-এর অধীনে মুতাওয়াসসিতা (এইচএসসি সমমান) পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ লাভ করেন। ১৯৯১ খ্রিষ্ঠাব্দে তিনি আজাদ দ্বীনি এবারায়ে তা’লিম এর অধীনে ফজীলত (ডিগ্রি সমমান) পরীক্ষায় প্রথম শেণিতে উত্তীর্ণ হন। আজাদ দ্বীনি এবারায়ে তা’লিম এর অধীনে ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দাওয়রায়ে হাদিস (মাস্টার্স সমমান) পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান লাভ করেন। তিনি ১৯৯২-১৯৯৩ শিক্ষাবর্ষে জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম থেকে ফতোয়া ও ইসলামি গবেষণা বিভাগে প্রথম শ্রেণী লাভ করেন।
১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে জামেয়া ইসলামিয়া লামারগ্রাম, জকিগঞ্জ, সিলেটে মুফতি ও মুহাদ্দিস পদে তিনি যোগদান করেন। পরবর্তীতে এই মাদ্রাসার ফতোয়া ও ইসলামি গবেষণা বিভাগের প্রধান পদে উন্নীত হয়ে অদ্যাবধি সুনামের সহিত কর্মরত আছেন। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে জকিগঞ্জ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে খতিব হিসাবে যোগদানকরত অদ্যাবধি কর্মরত আছেন।
সামাজিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডেও তাঁর সম্পৃক্ততা রয়েছে। তিনি ক. বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড) এর মজলিসে শূরা ও আমেলার সদস্য এবং সিলেট জেলা বেফাকের সেক্রেটারি। খ. জকিগঞ্জ কওমি মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদেরও তিনি সেক্রেটারি। গ. জাতীয় ইমাম সমিতি, সিলেট জেলা শাখার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। ঘ. জাতীয় ইমাম সমিতি, জকিগঞ্জ পৌরসভার শাখার সভাপতি। ঙ. উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটি জকিগঞ্জ, সিলেট-এর তিনি সদস্য। চ. উপজেলা চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটি জকিগঞ্জ সিলেট-এর সদস্য তিনি।
মুফতি আবুল হাসান ইসলামি বক্তা বা স্কলার হিসেবে দেশ ও বিদেশে তিনি জনপ্রিয়, পরিচিত ও সমাদৃত। ইসলামি বক্তা হিসেবে ভারত ও সৌদি আরব অংশগ্রহণ করেছেন।
তাঁর অনেক গবেষণাধর্মী লেখা স্থানীয় দৈনিক, মাসিক, ম্যাগাজিন ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি পবিত্র হজব্রত পালন ও হজগাইড হিসেবে আটবার এবং ওমরা পালনে দুইবার পবিত্র মক্কা-মদিনা গমন করেন।
রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্র মজলিসকে পছন্দ করতেন। কর্মজীবনে এসে খেলাফত মজলিসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি সিলেট জেলা খেলাফত মজলিসের উপদেষ্টা হিসাবে রয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে খুব একটা সক্রিয় না হলেও তিনি শিক্ষকতা ও ইমামতির পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে আসছেন। সম্প্রতি জকিগঞ্জের নদী ভাঙন নিয়ে তার কর্মতৎপরতা ছিল চোঁখে পড়ার মতো। দ্রুত ডাইক মেরামতের লক্ষে তিনি সর্বদলীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। জনদাবী আদায় পরিষদ নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে তিনি এলাকার বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তা নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি ইসলাম, মুসলমান ও উম্মাহর স্বার্থে এবং এলাকার উন্নয়নে সকল দল মতের মানুষকে নিয়ে কাজ করতে সব সময় আগ্রহী।
Leave a Reply