জকিগঞ্জে প্রতিবছর সুরমা ও কুশিয়ারা নদী ভাঙ্গনের ফলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন জকিগঞ্জবাসী। একেরপর এক বন্যা আক্রান্ত হয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ জকিগঞ্জবাসী এবার দাবী আদায়ে সোচ্চার উঠেছেন।মঙ্গলবার (১০ জুন) বিকাল ৩ টায় জকিগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সুরমা-কুশিয়ারা নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। জকিগঞ্জ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবুল হাসানের সভাপতিত্বে ও সাবেক কাউন্সিল মোস্তাক আহমদের পরিচালনায় মতবিনিময় সভার শুরুতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা কফিলুজ্জামান।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, সারা দেশের নদী ভাঙ্গন আর জকিগঞ্জের নদী ভাঙ্গন এক নয়। এখানে নদী ভাঙ্গনের ফলে দেশের মানচিত্রের পরিবর্তন ঘটে। দেশের মাটি ভারতের দখলের চলে যাচ্ছে। জকিগঞ্জের মানুষ ভিটেমাটি হারা হচ্ছে। শত-শত একর ফসলী জমি, ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট হারিয়ে আজ জকিগঞ্জ উপজেলাবাসীর চরম কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড পরির্দশ ছাড়া কার্যকরী কোন প্রদেক্ষেপ নিচ্ছে না জকিগঞ্জে। চলিত সপ্তাহে নদীর পানি কমতে থাকলেও এখনোও জরুরী মেরামতের কোন উদ্যোগ নেই তাদের।
বক্তারা বলেন, আগামী ৪ দিনের মধ্যে ভাঙ্গনের স্থানগুলো জরুরী মেরামতের ব্যবস্থা না করলে জকিগঞ্জ জনদাবী আদায় পরিষদ-এর ব্যানারে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ইকবাল আহমদ, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম রোকবানী চৌধুরী জাবেদ, খেলাফত মজলিস সিলেট জেলা সিনিয়র সহ সভাপতি মাওলানা মুখলিছুর রহমান, জকিগঞ্জ উপজেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা আব্দুল মুছব্বির, উপজেলা উপজেলা জমিয়তের সহ সভাপতি মাওলানা বিলাল আহমদ, জকিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি রহমত আলী হেলালী, ইসলামী আন্দোলন উপজেলা সভাপতি হেকিম শিহাব উদ্দিন, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী সারওয়ার হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস উপজেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল খালিক, জকিগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি মাসুক আহমদ, সাধারণ সম্পাদক শিব্বির আহমদ রনি, উপজেলা জমিয়তের সহ সভাপতি মাওলানা আব্দুস শহিদ, উপজেলা খেলাফত মজলিস এর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আলা উদ্দিন তাপাদার, ইসলামি আন্দোলন উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জয়নুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন, জকিগঞ্জ সোনারবাংলা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি জাফরুল ইসলাম, জকিগঞ্জ পৌর খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা আব্দুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জুবায়ের আহমদ, শ্রমিক জমিয়তের জকিগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমীন, ইসলামী যুব মজলিসের মাওলানা খায়রুল ইসলাম, যুব জামায়াতের আবিদুর রহমান, মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস উপজেলা সহ সভাপতি আফতাব উদ্দীন নোমানী, জকিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ সাধারণ সম্পাদক মুর্শেদ আলম লস্কর, আঞ্জুমানে আল ইসলাহ জকিগঞ্জ উপজেলা নেতা মাওলানা ফদ্বলুর রহমান, পৌর আল ইসলাহ সভাপতি কাজী হিফজুর রহমান, পৌর জাময়াতের সেক্রেটারী আবু রুশদ মো ইকবাল, ব্যাবসায়ী আতিকুর রহমান, প্রবাসী কয়েছ আহমদ প্রমুখ।
সভার শুরুতে জন দাবি আদায় পরিষদ এর পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সদস্য সচিব মোস্তাক আহমদ।
লিখিত বক্তব্যে চলতি বর্ষা মৌসুমে দ্বিতীয়বার বন্যা নিয়ন্ত্রণে অস্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ সংস্কার ও বাঁধ রক্ষায় আশু পদক্ষেপ গ্রহণ, সুরমা-কুশিয়ারার ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্লক ফেলে নদীর তীর রক্ষা, ভাঙ্গা বেড়ি বাঁধের টেকসই নির্মাণ, সুরমা-কুশিয়ারায় ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা এবং বন্যা ও নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করার দাবী জানিয়ে বলা হয়, ‘২০২২ সালে পরপর তিনবারের বন্যায় প্রায় পুরো জকিগঞ্জই তলিয়ে যায়। ২০২৪ সালেও একাধিকবার বন্যায় এই জকিগঞ্জের মানুষ বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রত্যেকবার বন্যা আসার পর আমরা নানা আশ্বাসবাণী শুনতে পাই। বিভিন্ন রকম প্রকল্প ও বরাদ্দের সুসংবাদ পাই। কিন্তু তারপর সেই একই পরিণতির মুখোমুখি হই বারেবার। কেন এসব দূর্গতি ও দূর্দশা আমাদের পিছু ছাড়েনা? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজতে হলে আমাদের গবেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা আমাদের চোখের সামনেই দেখছি,যুগ যুগ ধরে কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে বাংলাদেশের মানচিত্র দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। কেননা কুশিয়ারা নদীর ৫২.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে।যা বাংলাদেশের একমাত্র সীমান্ত নদী,যার মধ্যভাগে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত হিসেবে ঘোষিত রয়েছে। ভারত অংশে জায়গায় জায়গায় ব্লক ও পাথর ফেলে নদী ভাংগন প্রতিরোধ করায় বাংলাদশের অভ্যন্তরে নদীর তীর ভেঙ্গে দিন দিন এদেশের সীমানা সংকুচিত হচ্ছে। নদীর অবিরত ভাঙ্গন ও নদী খননের অভাবে প্রমত্তা কুশিয়ারার নাব্যতা ও হারিয়ে যাচ্ছে। ব্লক ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধ ও টেকসই বেড়ি বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড কতৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাবের কারণে জকিগঞ্জবাসী একদিকে হচ্ছে ভিটেমাটি হারা,অপর দিকে বর্ষাকালে মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রলয়ংকরী বন্যার। কুশিয়ারা নদীতে যথাযথভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধ ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের অভাবে পুরো দেশের মধ্যে জকিগঞ্জ উপজেলা একটি বন্যা প্রণব এলাকা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে। এছাড়া কুশিয়ারার ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ,ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ,ওসমানীনগর ও নবীগঞ্জ সহ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলার কয়েক লক্ষ নাগরিক।’
মতবিনিময় সভা থেকে আগামীকাল ১১ জুন ২০২৫,বুধবার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সাথে যৌথ মতবিনিময়।আগামী ২৩জুন ২০২৫, সোমবার জেলা প্রশাসক মাধ্যমে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং জেলা প্রশাসক ও সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সাথে মতবিনিময় ও চলতি মাসের শেষ সাপ্তাহে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার হাতে স্মারকলিপি প্রদান ও মতবিনিময় কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।