1. admin@zakiganjsangbad.com : admin :
বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ১১:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
জকিগঞ্জে জুলাই যোদ্ধাদের সম্মিলন অনুষ্ঠিত জকিগঞ্জে বিভিন্ন দপ্তর পরিদর্শন ও মতবিনিময় করলেন জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ জকিগঞ্জে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ উদ্ধার জকিগঞ্জে বিপুল পরিমাণ লুণ্ঠিত মালামালসহ চার ডাকাত আটক জকিগঞ্জে বৃদ্ধ মাহমুদ আলী খুনের ঘটনায় মামলা: ক্রমেই রহস্য উদঘাটন হচ্ছে জকিগঞ্জে চার মাস ধরে নেই এসিল্যান্ড! দুর্ভোগে সেবাপ্রত্যাশীরা ফাহিম আল্ চৌধুরী’র চমক: জকিগঞ্জ-কানাইঘাটবাসীর দরজায় কড়া নাড়ছে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন-এর ফ্রি চক্ষু সেবা সিলেট-৫ আসনে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মুফতী ফয়জুল হক জালালাবাদী জকিগঞ্জ সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দিকে নজর দিন জকিগঞ্জী চাচার খোলা চিঠি-

জকিগঞ্জ সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দিকে নজর দিন

রহমত আলী হেলালী
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫

সিলেটের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলার প্রতি অবহেলার বিষয়টি নতুন নয়। উপজেলা হিসেবে বরাদ্দ থেকে শুরু করে সরকারি প্রকল্পের পরিকল্পনা ও অনুমোদনে বরাবরই জকিগঞ্জের নাম থাকে পিছিয়ে। সিলেট জেলা শহর থেকে প্রায় শত কিলোমিটার দূরে প্রান্তিক উপজেলা হিসেবে স্বাস্থ্যসেবায়ও নানা সংকট বিরাজমান। যেমন উপজেলা একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেশির ভাগ যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে আছে। নেই প্রয়োজনীয় জনবলও। তিন লক্ষাধিক বাসিন্দার জন্য মাত্র ৩১ শয্যার হাসপাতালটির এ করুণ অবস্থা হলে কীভাবে সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে? মাত্র তিন জন চিকিৎসক দিয়ে একটি পৌরসভা ও নয়টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ কিভাবে চিকিৎসা সেবা পাবে?

জকিগঞ্জ সংবাদ-এ বিগত সংখ্যায় প্রধান শিরোনাম করা হয়েছে জকিগঞ্জ উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নানা সমস্যার কথা তুলেধরে। প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়. জকিগঞ্জ উপজেলার একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটে চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। এখানে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তিন লক্ষাধিক মানুষের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র তিনজন চিকিৎসক। ৩১ শয্যার এই হাসপাতালটি প্রায় একযুগ পূর্বে ৫০ শয্যা অনুমোদিত হলেও লোকবলের অভাবে আজও ৫০ শয্যায় হাসপাতালটির কার্যক্রম চালু হয়নি। তাই যুগযুগ থেকে ৩১ শয্যার হাসপাতালের জনবল দিয়ে কাজ চলছে জকিগঞ্জ উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ফলে প্রতিনিয়ত চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষকে।
বিদ্যমান ৩১ শয্যা হাসপাতালের জনবল কাটামো অনুসারে হাসপাতালে মোট পদ সংখ্যা ১৯৮ টি, শূন্য রয়েছে ৭১টি, সংযুক্তিতে রয়েছে ৪ জন কর্মকর্তা, প্রেষণে ২ জন, দীর্ঘদিন থেকে অননুমোদিত অনুপস্থিত ৭ জন নার্সিং কর্মকর্তা। ৩১ শয্যা হাসপাতালের জনবল কাটামো অনুসারে উপজেলার মোট চিকিৎসক পদ সংখ্যা ২০ জন। পদায়িত আছেন ৭ জন, তন্মধ্যে ৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংযুক্তিতে অন্যত্র কর্মরত। বাস্তবে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনকারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্যতীত বর্তমানে মোট চিকিৎসক সংখ্যা ৩ জন। ৩ জন চিকিৎসক দিয়েই সপ্তাহের ৭ দিন সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। নার্সিং ও মিডওয়াইফের পদসংখ্যা ৩২টি, বাস্তবে কর্মরত ১১ জন। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কর্মীর পদ সংখ্যা ৫টি, কর্মরত ৩ জন। ৪ বছর থেকে পড়ে থাকা অতি পুরনো অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘদিন পরে সচল হলেও অতি ঘন ঘন মেরামত করতে হয়। হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার রয়েছে কিন্তু বিশেষজ্ঞের অভাবে অপারেশন থিয়েটার অকার্যকর হয়ে রয়েছে। এতে করে অপারেশন থিয়েটার সংশ্লিষ্ট অনেক মূল্যবান চিকিৎসা সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্ত:বিভাগে ৩১ জন রোগীর জন্য বেড থাকলেও প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি থাকে। জরুরি বিভাগ থেকে প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ জন রোগী জরুরী চিকিৎসা সেবা নেয়। হাসপাতালের বহিবিভাগের প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ সাধারণ রোগী সেবা নিতে আসেন। হাসপাতালে তিনটি বিভাগে আগত এই বিশাল সংখ্যক রোগীদের কর্মরত মাত্র ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে সন্তুষ্ট জনক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালের বহিঃবিভাগে রোগীদের উপস্থিতি অনুযায়ী ঔষধ সামগ্রী একে বারে অপ্রতুল। হাসপাতালে আগত রোগী এবং দর্শনার্থীর তুলনায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীর স্বল্পতায় হাসপাতালটি প্রায়ই অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্ন দুর্গন্ধযুক্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের তৈরি হয়। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ রোগীদের সুস্থতার পরিবর্তে রোগ আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
এখন কথা হচ্ছে, এত সমস্যা ও সংকট নিয়ে হাসপাতালটি কীভাবে রোগীর চিকিৎসাসেবা দেবে? ফলে সেবা নিতে আসা রোগীদের অনেকেই পরীক্ষার যন্ত্র না থাকায় ফিরে যাচ্ছেন। চিকিৎসক না থাকায় ধরনা দিচ্ছেন বাইরের প্রাইভেট চিকিৎসকের কাছে। ফলে চিকিৎসার পেছনে বাড়তি খরচ পড়ছে রোগীদের। এতে ভোগান্তি বাড়ছে গরিব বা নিম্ন আয়ের মানুষের। সামর্থ্য না থাকায় অনেকে হাসপাতালেই পড়ে থাকেন।
উপজেলাগুলোর স্বাস্থ্যসেবার মান যদি সরকার উন্নত করে, আগামী দিনের সংস্কারে যদি এটি প্রাধান্য পায় এবং এগুলোকে যদি শক্তিশালী ও মানসম্মত করা যায়; পাশাপাশি এখানে প্রয়োজনগুলোর ঘাটতি যদি সরকার না রাখে, তাহলে আমাদের দেশের সর্বাঙ্গীনভাবে একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা আমরা খুব সুন্দরভাবে নিশ্চিত করতে পারবো।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে শক্তিশালী করতে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন স্থানীয় মানুষজনের সার্বিক চিকিৎসা সেখানেই সম্ভব হয়। এতে সেখানকার জনোগোষ্ঠীর বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য সেবা যা দরকার, তার বিরাট অংশই তারা পাবেন সেখানে। শুধুমাত্র এর চেয়ে উন্নত সেবার জন্যই তারা জেলা হাসপাতালগুলোতে যাবেন। আর জেলা হাসপাতালগুলোর চেয়ে উন্নত সেবার প্রয়োজনে তারা যাবেন বিশেষায়িত হাসপাতালে।
আমরা বিশ্বাস করি, অগ্রাধিকারভিত্তিতে সংস্কার প্রথম দরকার উপজেলা হাসপাতালগুলোতে। এখানে সংস্কার করলে দেশব্যাপী সংস্কারের প্রভাব পড়বে। এ ক্ষেত্রে আমরা উপজেলা হাসপাতালগুলোতে যদি জনবল নিশ্চিত করতে পারি, একই সাথে প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে আমরা উপজেলাতেই পূর্ণাঙ্গ একটা ইউনিট পেতে পারি যেখানে জনগন সার্বিক স্বাস্থ্যসেবাটা পাবে।
আমরা আশা করবো, হাসপাতালটির সমস্যাগুলো দ্রুত নিরসন করা হবে। যন্ত্রপাতি, চিকিৎসক ও শূন্য পদে জনবল নিয়োগসহ ৫০ শয্যার হাসপাতালের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করা হবে। এভাবে একটি হাসপাতাল চলতে পারে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দিকে জোর দিন, বাড়তি নজর দিন।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
জকিগঞ্জ সংবাদ-এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
প্রতিষ্ঠাতা: রহমত আলী হেলালী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায় সিসা হোস্ট