জকিগঞ্জ উপজেলার ৩নং কাজলসার ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত মাদাননগর-টু-সুরমা ডাইক কাঁচা রাস্তার পাঁশে বড়বন্দ এলাকার আমন ধানের জমি থেকে মোঃ মাহমুদ আলী নামের জনৈক বৃদ্ধের লাশ শনিবার (২ আগস্ট) বিকেলে স্থানীয় এলাকাবাসীর সহায়তায় উদ্ধার করেছে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ। নিহত বৃদ্ধের নাম মোঃ মাহমুদ আলী (৭২)। কানাইঘাট উপজেলার ১নং লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত বড়চাতল গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে।
জানা যায়, শনিবার সকাল আনুমানিক ১০ ঘটিকার দিকে আটগ্রাম এলাকার মাদাননগর-সুরমা ডাইক রাস্তার পাশে বড়বন্দে কৃষি জমিতে মাহমুদ আলীর লাশ দেখতে পান এলাকার লোকজন। রাস্তার এক পাঁশে লাশটি পড়ে থাকলেও বিপরীত পাঁশে তাঁর জুতা, লাইট ও খরচপাতি পাওয়া যায়। লাশের পাশে এক জোড়া সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাবস পড়ে আছে। পরে স্থানীয় এলাকার লোকজন জকিগঞ্জ থানা পুলিশকে অবগত করলে জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্নার নেতৃত্বে একদল পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরী করে লাশটি উদ্ধার করে সিলেট এম. এ. জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। প্রথম দিকে বৃদ্ধটির পরিচয় না পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই বৃদ্ধের ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি জানতে পেরে বৃদ্ধের ছেলে রেহিম আলী সহ পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজন ঘটনাস্থলে এসে লাশ শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০ ধারায় অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে খুনের মামলা দায়ের করেন নিহত মোঃ মাহমুদ আলী’র ছেলে রেহিম আলী। জকিগঞ্জ থানার মামালা নং ০৩, তারিখ: ০২.০৮.২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শুক্রবার ১লা আগস্ট বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে মোটর সাইকেল যোগে অজ্ঞাতনামা এক যুবক বৃদ্ধ মাহমুদ আলীর বাড়িতে এসে তাকে স্থানীয় সুরমা বাজারের দিকে নিয়ে যায়। রাত ১১টার দিকে মাহমুদ আলীর ছেলে রেহিম আলী তার পিতার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে না পেয়ে স্থানীয় সুরমা বাজারে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে পায়নি। পরে বাড়িতে এসে প্রতিবেশী বাড়িতেও খোঁজখবর নিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরদিন সকালে মাহমুদ আলী’র পরিবার জানতে পারেন তাঁর লাশ আটগ্রামের বড়বন্দ এলাকায় রাস্তার পাশে আমন ধানের জমিতে ফেলে রাখা অবস্থায় পাওয়া গেছে। পরে পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে পুলিশের সহায়তায় লাশ উদ্ধার করেন।
এদিকে নিহত মাহমুদ আলী’র ছেলে রেহিম আলী জানান, তাঁর পিতা একজন সহজ-সরল ও নিরীহ প্রকৃতির লোক ছিলেন। তিনি ওলী-আউলিয়া ও পীর-মাশায়েখদের ভক্ত ছিলেন। মানুষকে তাবিজ-কবজ দিতেন। এ সুবাদে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার মানুষ তাদের বাড়িতে আসতেন। ঘটনার আগের দিন শুক্রবার যে লোকটি তাদের বাড়িতে এসেছিল তাকে তার পিতাও চিনতেন না। অজ্ঞাতনামা ওই লোকটি তার পরিচয় দিয়েছে সে জকিগঞ্জ উপজেলার ৪নং খলাছড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং তার শশুড়বাড়ি আটগ্রামে। সে তার শশুড় বাড়িতে তদ্ববির ও তাবিজ দিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছে বলে নিহত মাহমুদ আলীকে জানিয়েছে। বিষয়টি মাহমুদ আলী দুপুরের খাবার ও আসরের নামাজ পড়তে গিয়ে তাঁর স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন।
রেহিম আলী আরও জানান, তার পিতা মাহমুদ আলী’র নিকট যে লোকটি গিয়েছিল তার ভিডিও ফুটেজ স্থানীয় সুরমা বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়াও তার পিতার মোবাইল ফোনের কললিষ্ট উত্তোলন করা হলে বিষয়টি আরোও পরিস্কার হবে। সর্বপরি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে হত্যার বিস্তারিত জানা যাবে। তিনি তার পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে বলেন, আমার বাবা কোন দিন কারো সাথে খারাপ আচরণ করতে দেখিনি। তবুও কেন আমার পিতাকে হত্যা করা হয়েছে? কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি তার পিতার খুনের বিচার দাবী করেন এবং পুলিশ সহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
এ বিষয়ে জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ঘটনাস্থল আমিসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনার রহস্য কিছুটা উদঘাটন হয়েছে। পুলিশ এনিয়ে গভীরভাবে তদন্ত করছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply