জকিগঞ্জে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সনাতন ধর্মমতে, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মা দুর্গার সন্তান কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীসহ চলে যান কৈলাসে স্বামীর ঘরে। তিনি আবার এক বছর পর নতুন শরতে ‘পিতৃগৃহ’এই ধরণীতে ফিরবেন। দেবী দুর্গা এবার এসেছিলেন ঘোড়ায় চড়ে, চলে গেলেন দোলায় বা পালকি চড়ে।
শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) বিকাল ৫ টায় জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর তীরে অবস্থিত কাস্টমস ঘাটে শতশত মানুষের উপস্থিতিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা। ভক্তরা বিষাদ ভুলে হাসিমুখে দেবী মাকে বিদায় জানাতে মেতে ওঠেন।
তবে কুমিল্লার অনাকাঙ্খিত সেই ঘটনায় জকিগঞ্জ কাস্টমস ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনে ছিলো না তেমন আমেজ। প্রতিবছর শারদীয় দুর্গোৎসবের বিজয়া দশমীর দিনে জকিগঞ্জের সীমান্ত নদী কুশিয়ারার দুই পারে ভারত-বাংলার হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলা বসে। কিন্তু এবার কুশিয়ারার ওপারে ভারতে হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলা হলেও কুশিয়ারার এপারে বাংলাদেশে তেমন উৎসব বা আমেজ পরিলক্ষিত হয়নি। এবার জকিগঞ্জ কাস্টমস ঘাট ঢাকঢোল, কাসর, করতাল, মন্দিরা, বাঁশি এবং শঙ্খ’র ধ্বনিতে মূখরিত হয়নি। জকিগঞ্জ কুশিয়ারা নদীর কাস্টমঘাট উৎসবের বর্ণিল রঙে সাজানো থাকলেও কাস্টমস ঘাটে এসে প্রতিমা বিসর্জনে আগ্রহ দেখায়নি পূজার্থীরা। প্রতিবছর প্রায় অর্ধশতাধিক মন্ডপ থেকে ট্রাক ও লঞ্চ যোগে জকিগঞ্জ কুশিয়ারা নদীর কাস্টমস ঘাটে প্রতিমা নিয়ে আসলেও এবার বিশৃঙ্খলা এড়াতে ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে কাস্টমস ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন করতে আসেননি বলে জানান অনেকইে। তবে যেকোন ধরণের নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও আনসার সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় ছিল। গোয়েন্দা তৎপরতা ছিলো লক্ষ্যনীয়। মোতায়েন ছিলো অতিরিক্ত পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।
আয়োজকরা জনান, সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জে এবার সার্বজনীন ১০০টি ও ব্যক্তিগত ০৪ টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করা হয়। কিন্তু মাত্র ৫/৬টি মন্ডপ থেকে ভক্তরা হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসায় দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে শেষবারের মতো’ তেল-সিঁদুর পরিয়ে, চোখের জলে বিসর্জন দিতে কাস্টমঘাটে নিয়ে আসেন। উপজেলার অন্য মন্ডপগুলোর প্রতিমা পার্শ্ববর্তী খাল-বিল, নদী ও পুকুরে বিসর্জন দিয়ে শেষ হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব।
অপরদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার শেষ দিনে প্রতিমা বিসর্জন দিতে আসা পূজার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে কাস্টমস ঘাটে আসেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা ও সাংবাদিক সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নেতৃবৃন্দ। জকিগঞ্জে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে কুশিয়ারা নদীর তীরে নিরঞ্জন ঘাট নামে একটি স্বাগত মঞ্চ তৈরি করা হলে সেখানে আগত অতিথিবৃন্দ শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। বাংলাদেশ পূজা পরিষদ জকিগঞ্জ শাখার সহসভাপতি সজল বর্ম্মণ-এর সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সুজন দে’র পরিচালনায় এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আনোয়ার সাদাত, জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমী আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জকিগঞ্জ সার্কেল) জাকির হোসাইন, জকিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল কাসেম, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি এডভোকেট মোশতাক আহমদ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বুরহান উদ্দিন আহমদ, জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ইকবাল আহমদ চৌধুরী একল, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাকিম হায়দর, জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল আহাদ, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা রওশন শ্যামলী, ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুস সবুর, জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কেফায়াতুল কিবরিয়া চৌধুরী, আব্দুস সালাম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহমান, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শেখ আব্দুল করিম, জকিগঞ্জ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিভাকর দেশমূখ্য, জকিগঞ্জ পৌরসভা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ আব্দুল গণী, যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম সুহেল, আব্দুল কাইয়ুম, উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি বাবর হোসাইন চৌধুরী ও সমাজসেবা সম্পাদক হাসান আহমদ প্রমূখ।