জকিগঞ্জে সড়কে ঝরছে প্রাণ, নেই প্রতিকার। বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন মাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ হচ্ছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ। সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমের বদৌলতে আমরা যে সংবাদ পাই, তা কেবল একটি ক্ষুদ্র অংশ। বাস্তবতায় এর পরিমাণ আরও বেশি। প্রাণহানি, আহতদের দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ক্ষতি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মানসিক ও আর্থিক বিপর্যয়, এসব মিলে সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের সমাজের জন্য এক ভয়ানক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অনেক পরিবারের আশা-আকাঙ্খা প্রতিশ্রুতি আর সম্ভাবনা। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এত আইন হলো, এত পরিকল্পনা নেওয়া হলো, কিন্তু কোনো কিছুই কাজে লাগছে না। এটা যেমন আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা, তেমনি সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবহেলাও বটে।
জকিগঞ্জ সংবাদে বিগত সাপ্তাহের প্রধান শিরোনামে দেখা যায়, ২০২৫ সালের ১লা জানুয়ারী থেকে ৯ আগস্ট, শনিবার পর্যন্ত সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ১৬ জন তরতাজা যুবক, বৃদ্ধ ও শিশু নারী-পুরুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এ সংখ্যাটা কিন্তু সঠিক নাও হতে পারে। এ সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশী হতে পারে বলে ধারণা সচেতন মহলের। সচেতন মহল মনে করেন-গণমাধ্যমের আড়ালে থেকে যায় অনেক সড়ক দূর্ঘটনার মৃত্যু। তাছাড়াও অনেকে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়ে কিছুদিন পর মৃত্যু বরণ করলে সেটার খবর রাখেনা গণমাধ্যম। ভুক্তভোগী পরিবারও গণমাধ্যমে বিষয়টি জানানোর প্রয়োজন বোধও করেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের মান যে হারে উন্নত হয়েছে, সেই হারে এসব সড়কে চলা গণপরিবহনগুলোর মান বাড়েনি। ফলে দুর্ঘটনার মাত্রা বেড়েছে। আবার এ সড়কে চলার মতো উপযুক্ত ফিটনেস নেই বেশিরভাগ গাড়ির। সেইসঙ্গে চালকদের উন্নত প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। এতে অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
জকিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও অদক্ষ চালক। এমন বহু যানবাহন প্রতিদিন রাস্তায় চলছে, যেগুলো কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। দ্বিতীয়ত, বেপরোয়া গতি এবং ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা সড়ক দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ। চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইনের প্রতি অজ্ঞতা কিংবা ইচ্ছাকৃত অবজ্ঞার কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। তৃতীয়ত, জকিগঞ্জের সড়ক অবকাঠামোর মান অত্যন্ত নিম্ন। অধিকাংশ রাস্তাই নিয়মিত মেরামত করা হয় না, ফলে সেগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও সড়ক ব্যবস্থাপনা নিরাপদ করতে দৃশ্যমান কোনো পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ এখনো অনুপস্থিত।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃতি ও এর কারণ বিশ্লেষণ করে প্রতিকারের পথ খুঁজে বের করাই এখন সময়ের দাবি। এটা কেবল প্রশাসনিক সমস্যাই নয়; এটি আমাদের সামগ্রিক সামাজিক ব্যবস্থার একটি বড় ঘাটতি। প্রতিকার নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসন, জনগণ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিটি পক্ষের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন।
Leave a Reply