সিলেট জুড়েই এখন আলোচিত একটি ঘটনা হচ্ছে জকিগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারের নিরীহ ব্যবসায়ী নুমান উদ্দিন হত্যাকান্ড। নুমান উদ্দিন নিখোঁজ হন ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ ঘটিকার পর থেকে। আর তাঁর লাশ পাওয়া যায় ১ অক্টোবর বিকেল ৪ টার দিকে। নিজ বাড়ির প্রায় একশো গজের ভিতর একটি ধানক্ষেতে লাশ পাওয়ার পর থেকে লোকমুখে আওয়াজ উঠে নুমান উদ্দিনকে হত্যা করেছে তাঁর দুধ ভাত দিয়ে লালিত পালিত শ্যালক হানিফ উদ্দিন সুমন ও তাঁর পরিবারের লোকজন। যদিও বিষয়টি সন্দেহজনকভাবে বলা হচ্ছে, তবুও এর পেছনে রয়েছে নানা রহস্য ও যৌক্তিকতা।
এলাকাবাসীর মতে, নুমান উদ্দিনের লাশ যেখানে পাওয়া গেছে, সেখান থেকে নুমান উদ্দিনের বাড়ি পর্যন্ত ধানক্ষেতে একটি চিহ্ন রয়েছে। সেখানকার মানুষ মনে করেন-আর্থিক হিসাব নিকাশ ও বাড়ির জায়গা নিয়ে বিরোধের জেরে নুমান উদ্দিনকে হত্যা করা হয়। নুমান উদ্দিনের মৃত্যুর পর পরিবারের ভূমিকা নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলেন এলাকাবাসী। শুধু এলাকাবাসী নন, নুমান উদ্দিনের একমাত্র আপন ভাই রিয়াজ উদ্দিন অভিযোগ করছেন তাঁর বড় ভাই নুমান উদ্দিনকে হত্যা করেছে- নুমান উদ্দিনের শ্যালক সুমন, স্ত্রী ও সন্তান মিলে। আবার নিহতের বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি পাল্টা অভিযোগ করছেন- তার বাবাকে চাচারা হত্যা করেছেন। পরিবারের এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্য যখন চরম ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে, ঠিক তখন এলাকার লোকজন শুধুমাত্র নুমান উদ্দিনের শ্যালক সুমন, স্ত্রী ও সন্তানদের অভিযুক্ত করেই কথা বলছেন।
এমন জটিল পরিস্থিতিতে পুলিশ নুমান উদ্দিনের বড় মেয়েকে মামলার বাদী করে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে একটি হত্যা মামলা নিয়ে বসেন। স্বাক্ষী দেয়া হয় নুমান উদ্দিনের মেয়ের পছন্দের লোকজনকে। এলাকাবাসীর নিকট মূল অভিযুক্ত সুমনকে মামলার রেকর্ডে স্বাক্ষী করা হলেও পরবর্তীতে তাকে সন্দেহজনক আসামি হিসাবে আটক করা হয়। যদিও একজন মেয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার বাদী হওয়ার কথা, তবুও বিষয়টির জটিলতা বিবেচনা করে পরিবারের অন্যান্যদের সাথে পরামর্শ করে মামলাটা নেয়া পুলিশের উচিত ছিল বলে সচেতন মহল মনে করছেন।
এদিকে এই হত্যাকান্ডের অনেক দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশের রহস্য উদঘাটন করতে না পারা এবং মামলার বাদী আটক সুমনকে রক্ষায় ব্যাপক তৎপরতা দেখানোর ফলে জনমনে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ কিছুদিন পুলিশের প্রতি আস্থা রেখে যখন ভালো কোন ফলাফল দেখতে না পায়, ঠিক তখনই রাস্তায় নেমে পড়ে। গত বুধবার জকিগঞ্জের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একটি মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা কালিগঞ্জ বাজারে করেছে সেখানকার সর্বস্তরের নাগরিকবৃন্দ। তারা এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন, আসামী গ্রেফতার ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। অন্যতায় কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও দেন তাঁরা। সভা থেকে বিভিন্ন বক্তা পুলিশের নানা ভুমিকা নিয়েও একাধিক প্রশ্ন তুলেন।
তাই আমরা মনে করি, জকিগঞ্জ থানা পুলিশ জনগণের পালস বোঝে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যেন গ্রহণ করেন। সব কিছুর উর্ধ্বে থেকে পুলিশ যেন এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত খুনিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসেন। এ ঘটনার কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর রাখা উচিত।
Leave a Reply