সিলেটের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারে কুমিল্লার একটি পূজামন্ডপে পবিত্র ক্বোরআন অবমাননার খবর শুনে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিক্ষুব্ধ জনতা। কোন ব্যানার বা ফেসটুন ছাড়াই হাজারো মানুষ বুধবার রাত ৮ টার দিকে কুমিল্লার অনাকাঙ্খিত এ ঘটনার প্রতিবাদে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করতে শুরু করে। মিছিলে শ্লোগান তোলা হয়-
নারায়ে তাকবীর-আল্লাহু আকবার, দ্বীন ইসলাম-জিন্দাবাদ, ইসলামের শত্রুরা- হুশিয়ার সাবধান, আল ক্বোরআনের আলো- ঘরে ঘরে জ্বালো, একশন একশন-ডাইরেক্ট একশন, মুসলমানদের একশন-ডাইরেক্ট একশন।
মিছিলকারীরা এমন অনেক ধর্মীয় শ্লোগান দিয়ে পুরো কালিগঞ্জ বাজার প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে। মিছিলে টুপি পাঞ্জাবী পরা হুজুরদের চেয়ে সার্ট ও প্যান্ট পরা যুবকদের সংখ্যা ছিল চোঁখে পড়ার মতো। মিছিলকারীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক উত্তেজনা।
এমন পরিস্থিতিতে কালিগঞ্জ বাজারে অবস্থিত ৯নং মানিকপুর ইউনিয়ন-এ অবস্থান নেন জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব লোকমান উদ্দিন চৌধুরী, জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমী আক্তার, জকিগঞ্জ সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসাইন, জকিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল কাসেম ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহতাব হোসেন চৌধুরী।
মিছিলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব লোকমান উদ্দিন চৌধুরী কালিগঞ্জ বাজার জামে মসজিদের মাইকে গিয়ে মিছিলকারীদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে নানাভাবে অনুরোধ করেন। তাঁর এমন অনুরোধ শুনে মিছিলের নেতৃত্বে থাকা কয়েকজন একটি পথসভার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করতে দেখা যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মিছিলে থাকা একদল উশৃঙ্খল যুবক সেখানে পথসভায় মিলিত না হয়ে পূনরায় মিছিল শুরু করে যখন স্থানীয় মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে পৌছে তখন সেখানে পূর্ব থেকে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি ইউনিয়নের সামনে রাখা প্রশাসনের ৩টি সরকারি গাড়ি ও ১টি ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুর করতে শুরু করে।
ভাঙচুরকৃত গাড়ি হচ্ছে- জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান-এর ব্যক্তিগত প্যারডো গাড়ি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকারি নতুন গাড়ি, জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জকিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)’র সরকারি গাড়ী পিকআপ।
বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহতাব হোসেন চৌধুরী বলেন, বিক্ষোভকারীরা গাড়িগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪/১৫টি রাবার বুলেট উপরের দিকে নিক্ষেপ করে।
অপরদিকে সংঘর্ষে জকিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মোস্তফা আহমদসহ একাধিক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ২৪/২৫ জন আহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই জানিয়েছেন। এ ঘটনায় বুধবার রাতেই সিলেটের জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম ও সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ প্রদান করেন। এছাড়া এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জকিগঞ্জে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করেন।
জকিগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আবুল কাসেম হামলার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জকিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব লোকমান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার লক্ষ্যে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্টী পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রশাসন কাউকে কোন ছাড় দেবে না।
Leave a Reply