জকিগঞ্জ উপজেলার ৬নং সুলতানপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত শতবর্ষী সখড়া জামে মসজিদের নামকরণ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। মসজিদের নামকরণ নিয়ে সখড়া ও এলংজুরি গ্রামের মুসল্লিরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে মারামারি ও আগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এনিয়ে শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) বাদ জুম্মা সখড়া জামে মসজিদ দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিপক্ষের হামলায় সখড়া গ্রামের মসব আলীর ছেলে আব্দুস সালাম ছনল, হেলাল উদ্দিন উদ্দিনের ছেলে মুক্তাদির হোসেন, শরাফত আলীর ছেলে আব্দুস শুক্কুর, আঞ্জির উদ্দিন ও তার স্ত্রী এবং ইলাবাজ গ্রামের শামসুল হকের ছেলে লিটন আহমদ গুরুত্বর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বুধবার ভোর রাতে সখড়া গ্রামের প্রবাসী কমর উদ্দিন কমই মিয়ার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ ঘটনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জাকির হোসাইন। এর আগে একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জকিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোশাররফ হোসেন।
স্থানীয়রা জানান, মারামারির ঘটনায় সখড়া গ্রামের আব্দুস সালাম ছনল বাদী হয়ে গত ১৮ নভেম্বর ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে জকিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে একজনকে আটক করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শতবছরের অধিক সময় থেকে সখড়া জামে মসজিদ নামে মসজিদটি চলে আসলেও গত ৪ বছর থেকে মসজিদের নামকরণ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। মসজিদটি ইছাপুর মৌজার সখড়া গ্রামে অবস্থিত হলেও ইলাবাজ, সখড়া, হালঘাট ও এলংজুরী গ্রামের মুসল্লিরা নামাজ রোজাসহ ধর্মীয় সকল অনুষ্ঠানাদি এই মসজিদে আদায় করে থাকেন। অতিতে কোন ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা না দিলেও গত ৩/৪ বছর থেকে নামকরণ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
এলাকার লোকজন জানান, বিগত মাঠ জরিপে একটি মহল সখড়া জামে মসজিদের পরিবর্তে ‘এলংজুরী-সখড়া গ্রামের জামে-মসজিদ নামে নামকরণ করেন। মাঠ জরিপ চলাকালীন সময়ে মসজিদ কমিটির দায়িত্বে ছিলেন এলংজুরী গ্রামের মৃত মুহিবুর রহমান।
ইলাবাজ, হালঘাট ও সখড়া গ্রামের মুসল্লীরা জানান, ৩টি গ্রামের অগোচরে মৃত মহিবুর ও তার সহযোগীরা মসজিদের নাম পরিবর্তন করে এই দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে রেখে গেছেন। মহিবুর রাহমানের মৃত্যুর পরে মসজিদের সকল কাগজপত্র তার পরিবার ও এলংজুরী গ্রামের লোকজন গায়েব করে ফেলেন। দীর্ঘ ৪বছর থেকে প্রতি শুক্রবার জুম্মার পর মুসল্লীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বাকবিতন্ডা ও উত্তেজনাকর কথাবার্তা চলে আসছে। সম্প্রতি উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পার্শ্ববর্তী এলাকার গণ্যমান্য সালিশি ব্যক্তিরা বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগে নেন। এসময়ে রেজুলেশনে লিখিত সাক্ষরের মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে মিমাংসা চেষ্টা ও বিচার কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় পুনরায় এলংজুরী গ্রামের লোকজন সালিশ-বৈঠকে অমান্য করে পুনরায় উত্তেজনায় লিপ্ত হয়। বিষয়টি জানতে পেরে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ আইন শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং বিষয়টি মিমাংসা জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান/মেম্বারদের দ্বারস্থ হয়ে সমাধানের নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে সখড়া-হালঘাট, ইলাবাজ ও এলংজুরী গ্রামের মুসল্লীদের নিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে একটি লিখিত রায় প্রদান করেন ৬ নং সুলতানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য শামীম আহমদ।
এলাকার অনেকের অভিযোগ, চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য শামীম আহমদ কোন কাগজপত্র পর্যালোচনা না করে অযৌক্তিক ভাবে একটি লিখিত রায়ের কারণে এই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে ৬নং সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলার জন্য ফোন করে পাওয়া যায়নি। এছাড়া অপর পক্ষের লোকজন এলাকায় না থাকায় তাদেরও বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
তবে এ বিষয়ে দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জকিগঞ্জ থানার এসআই সাইফুল ইসলাম বলেন, মারামারি ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে একজন আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি আসামীদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
Leave a Reply