আলহামদুলিল্লাহ্। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। যিনি মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন “আশরাফুল মাখলুকাত” বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে। তাই আমাদের মাঝে থাকবে মায়া মমতা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। আমরা একে অপরের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়াব, সান্ত্বনা দেব, সহযোগিতার হাত বাড়াব, ইসলাম আমাদের তাই শিক্ষা দেয়।
মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন “তোমরা সৎ কর্ম ও তাকওয়া তথা আল্লাহ ভীতির কাজে পরস্পরকে সহায়তা কর এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে পরস্পরকে সহায়তা করো না” (সূরা মায়েদাহ; ২)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন “আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে” (মুসলিম ২৬৯৯, তিরমিজি ২৯৪৫)।
ইসলামের দৃষ্টিতে মানব সেবার অনেক ফজিলত রয়েছে- প্রথমত: মানবসেবার কারণে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা সেবাকারীর দুঃখ-কষ্ট সমূহ দূর করে দেবেন। দ্বিতীয়ত: দুনিয়া ও আখেরাতে অনেক ছাড় দিবেন। তৃতীয়ত: তার বিপদ-আপদে সাহায্য সহায়তা করবেন। চতুর্থত: মানবসেবা আমাদেরকে জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করে জান্নাতে প্রবেশ করতে সাহায্য করবে। পঞ্চমত: মানবসেবার মাধ্যমে আল্লাহর ভালবাসা পাওয়া যায়। এ ছাড়া আরও অনেক ফজিলত রয়েছে।
মুমিনের বৈশিষ্ট্য হল তারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিঃস্ব-দরিদ্র, ইয়াতিম ও কারাবন্দিদেরকে খাদ্য দান করবে।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন “তারা আল্লাহর মহব্বতে অভাবগ্রস্ত, ইয়াতিম ও বন্দিদের আহার্য প্রদান করে। (তারা বলে) শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমরা তোমাদের খাদ্য দান করি। আর আমরা তোমাদের নিকট থেকে কোনো প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করিনা।” (সূরা দাহর ৯-১০)।
নিঃস্ব, দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ানো ইসলামের অন্যতম উত্তম আমল।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রা. থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন কাজটি উত্তম? তিনি বললেন, “তুমি অভাবীকে খাদ্য খাওয়াবে।” (বুখারি ৬২৩৬, ২৮, ১২; মুসলিম ৪২)।
প্রতিবেশিকে অভুক্ত রেখে নিজে পেটপুরে খাওয়া কোনো মুমিনের কাজ নয়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “সে ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন নয়, যে উদরপূর্তি করে খায় অথচ তার পাশেই তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে” (সহিহুল জামে; ৫৩৮২; বায়হাকি ২০১৬০; মিশকাত; ৪৯৯১)।
উল্লেখিত আয়াতসমূহ ও হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নিঃস্ব, দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ানো ইসলামের অন্যতম সেবামূলক কাজ, যার মাধ্যমে আমরা জান্নাত লাভ করতে ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে আশাবাদী হতে পারি। রোগীর সেবা করা বা রোগীকে দেখতে যাওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে সমাজকল্যাণমূলক একটি অন্যতম পুণ্যময় উত্তম মানবসেবার কাজ। একে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের হক বা অধিকার বলে অভিহিত করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “একজন মুমিনের ওপর অপর মুমিনের ছয়টি অধিকার রয়েছে:
(১) যখন কোনো মুমিনের রোগ-ব্যাধি হয়, তখন তার সেবা-শুশ্রূষা করা।
(২) কেউ মারা গেলে তার জানাজা ও দাফন-কাফনে উপস্থিত হওয়া।
(৩) কেউ দাওয়াত করলে তা গ্রহণ করা অথবা কারো ডাকে সাড়া দেওয়া।
(৪) কারো সাথে সাক্ষাৎ হলে সালাম প্রদান করা।
(৫) হাঁচি দিলে জবাব দেওয়া।
(৬) উপস্থিত-অনুপস্থিত সকল অবস্থায় মুমিনের কল্যাণ কামনা করা।” (তিরমিজি ২৭৩৭, নাসাঈ ১৯৩৮)।
রোগীকে দেখতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাও এবং বন্দীকে মুক্ত কর।” (বুখারি ৫৩৭৩, আবু দাউদ; ৩১০৫)। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে মানুষ দুর্দশায় নিপতিত হয়ে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে নিঃস্ব হতে পারে। যেমন– ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, বন্যা, নদী ভাঙন সহ যেকোনো সংকটময় অবস্থায় অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন “যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়ার বিপদের মধ্যে একটি বিপদ দূর করে দিবে, আল্লাহ তায়ালা তার আখিরাতের বিপদসমূহের মধ্যে একটি (কঠিন) বিপদ দূর করে দিবেন।” (বুখারি ২৪৪২, মুসলিম ২৫৮০, মিশকাত ২০৪)।
দু-জাহানের সর্দার সত্য পথের পথিক ও আলোর দিশারি আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্বরূপ নিজে “হিলফুল ফুজুল“ নামে একটি সেবামূলক সংগঠন বা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার মাধ্যমে মানবতার সেবা, অসহায়দের সাহায্য-সহযোগিতা করে আরবের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। রাসুলের এই মানব সেবামূলক কাজ বিধর্মীদের কাছে ও প্রশংসনীয় ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের সদস্যরা নিজে না খেয়ে গরিব-দুঃখীকে খাবার দিয়েছেন। অন্যকে সাহায্য করার জন্য নিজের প্রয়োজনকে বিসর্জন দিয়ে মানবসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “তোমরা পৃথিবী বাসীদের প্রতি দয়া কর, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।” (তিরমিজি ১৯২৪)। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের দৃষ্টিতে মানবসেবা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
(লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক – সুবাস, (সরকার অনুমোদিত বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা) থানা: কোতোয়ালি, জেলা: সিলেট। মোবাইল: ০১৭২৫৬৬০৪৪৭।
Leave a Reply