বাংলাদেশের গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে চোঁখের রোগ একটি সাধারণ সমস্যা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা জটিলতা তৈরি হলেও দারিদ্র্য, সচেতনতার অভাব এবং চিকিৎসা সেবার সীমাবদ্ধতার কারণে অনেকেই সময়মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারেন না। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে ফাহিম আল্ চৌধুরী ট্রাস্টের সহযোগিতায় ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জকিগঞ্জ-কানাইঘাটে মাসব্যাপী ফ্রি চক্ষু সেবা কার্যক্রমের শুরু করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল ১০ ঘটিকায় জকিগঞ্জ উপজেলার মৌলভী ছাইর আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে “আলোকিত দৃষ্টি, মানবিক বন্ধন, চোঁখের আলো ফিরিয়ে দিতে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ফ্রি চক্ষু সেবা কার্যক্রমের শুভ সূচনা করা হয়।
এই চক্ষু সেবা কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য ছিল গ্রামীণ দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণের মাঝে দৃষ্টিশক্তির উন্নয়ন, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করা।
চিকিৎসা কেন্দ্রে ৪০ বছরের বেশি বয়সী দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। পাশাপাশি নারী, বিধবা, প্রবীণ এবং কৃষি ও শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট এমন ব্যক্তিদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়, যারা দৈনন্দিন কাজে চোখের ওপর নির্ভরশীল।
চিকিৎসা কেন্দ্রে বিনা মূল্যে চোঁখের পরীক্ষা, প্রয়োজন অনুযায়ী চশমা বিতরণ, চোখের রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসার জন্য ফ্রি অপারেশনের ব্যবস্থাও রাখা হয়।
বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী দিনে দেখা যায়, একাধিক লাইনে দাঁড়িয়ে রেজিস্ট্রেশন করছেন চোঁখের সমস্যায় থাকা রোগীরা। কারো বয়স আশি, কারো বা চল্লিশ। নারী ও পুরুষ রোগী জড়ো হন জকিগঞ্জের পরচকে অবস্থিত মৌলভী ছাইর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে। ১২টি বুথে তাদের রেজিস্ট্রেশনের পর চিকিৎসা সেবা দেন একদল চিকিৎসক। বিপুল সংখ্যক রোগীদের এমন সেবার উদ্যোগ নেয়ায় জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও ফাহিম আল চৌধুরী ট্রাস্টের প্রশংসা করেছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ৮০ বছরের বৃদ্ধা আয়ারুন নেসা। চোঁখ দিয়ে পানি পড়ছে অনবরত। চোঁখে ঝাপসাও দেখেন। কিন্তু আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় শহরে এসে চোখের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে দিন দিন যেন তিনি দৃষ্টি হারাতে বসেছেন। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের চক্ষু সেবার খবর পেয়ে তিনি পরচকের মৌলভী ছাইর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ছুটে এসেছেন। আয়ারুন পরচকের পার্শ্ববর্তী নয়াগ্রামের বাসিন্দা। একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ তার চোঁখ দেখেছেন, পেয়েছেন প্রয়োজনীয় ঔষধও। আয়ারুন বেজায় খুশি, তার আলোর প্রদীপ আর নিভবে না ফিরে পেয়েছেন আলোর ঝলকানি।
পার্শ্ববর্তী মহিদপুরের আসমা বেগমের চোঁখেরও একই অবস্থা। কিন্তু টাকা-পয়সার অভাবে চোঁখের আর চিকিৎসা করা হয়ে ওঠেনি। দিন দিন তার চোঁখও খারাপের দিকে যাচ্ছিল। তিনিও চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে তার চোঁখ দেখাতে পেরেছেন। কেবল আয়ারুন নেসা আর আসমা বেগমই নয়। তাদের মতো শত শত নারী-পুরুষ তাদের আলোর প্রদীপ ফেরাতে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
জানা যায়, বিনামূল্যে এই চক্ষু সেবা আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। প্রথমধাপে সেবা প্রদানের পর পরবর্তীতে আবারও একই সময়ের মধ্যে রোগীদের ফলোআপ গ্রহন করা হবে। উদ্বোধনী দিনে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয় এবং প্রায় দুই শতাধিক রোগীকে অপারেশনের জন্য বাছাই করা হয়। গতকাল শনিবার উপজেলার বাবুবাজারের জোবেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ফ্রি চক্ষু সেবা কার্যক্রম ফাহিম আল্ চৌধুরী ট্রাস্টের সহযোগিতায় জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন পরিচালনা করেছে। আগামী বুধবার বীরদল উচ্চ বিদ্যালয়, ২৩ আগষ্ট হাফিজ মজুমদার বিদ্যানিকেতন, ৩০ আগষ্ট কানাইঘাটের শাহজালাল ছাত্তারিয়া মাদ্রাসা, ৬ সেপ্টেম্বর মুলাগুল উচ্চা বিদ্যালয়, ৮ সেপ্টেম্বর চতুল হারাতৈল মহিলা মাদ্রাসা ও ১৩ সেপ্টেম্বর জকিগঞ্জের ঈদগাহ বাজার উচ্চ বিদ্যায়ে ফ্রি চক্ষুসেবা অনুষ্ঠিত হবে।
ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সমাজসেবী, শিক্ষানুরাগী ও শিল্পপতি ফাহিম আল্ চৌধুরী জানিয়েছেন-এ ধরনের আয়োজন ভবিষ্যতেও নিয়মিতভাবে চলমান থাকবে বলে।
Leave a Reply