সিলেটের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর বেড়িবাঁধ ধ্বসে ৪টি স্থানে ভয়ংকর ফাটল দেখা দিয়েছে।রোববার (১ জুন) সন্ধ্যা পর্যন্ত জকিগঞ্জ পৌরসভার মাইজকান্দি, বীরশ্রী ইউপি’র গদাধর, লক্ষীবাজার ও জকিগঞ্জ সদর ইউপি’র মানিকপুর এলাকায় বেড়িবাঁধে ফাটল ধরার খবর পাওয়া গেছে। ভাঙন আতঙ্কে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী শনিবার নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
জানা যায়, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শনিবার রাতে জকিগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের মাইজকান্দি ও ২নং বীরশ্রী ইউপি’র গদাধর ও লক্ষীবাজার এলাকায় বেড়িবাঁধের প্রায় ২৫০ ফুট এলাকা ধ্বসে বেড়িবাঁধে ফাঁটল দেখা দেয়। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রোববার ৫নং জকিগঞ্জ সদর ইউপি’র মানিকপুর এলাকার নতুন বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বেড়িবাঁধ ধ্বস ও ভাঙ্গন রোধে জরুরি ভিত্তিতে মাটি ভর্তি বস্তা ডাম্পিংসহ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ব্যবস্থা না নিলে যে কোন মুহূর্তে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে। তলিয়ে যেতে পারে মাঠের ভরা ফসল, ক্ষেত খামার, মৎস্য খামার, পুকুর, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ডুবে এলাকার মানুষের সীমাহীন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হতে পারে।
স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশ স্বাধীনের পর থেকেই জকিগঞ্জ উপজেলাবাসী সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনের কারণে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তবুও কেউ জনগুরুত্বপূর্ণ এই সমস্যার সমাধানে কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। বছরের পর বছর এমপি, মন্ত্রী ও চেয়ারম্যানদের আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে জকিগঞ্জবাসীর গুরুত্বপূর্ণ এ দাবী। ২০২২ ও ২০২৪ সালে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পুরো সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিলে নড়েচড়ে উঠেন জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। তখন এলাকাবাসী ধারণা করেছিলেন এবার হয়তো জকিগঞ্জবাসীর নদী ভাঙ্গনের সমস্যা স্থায়ী সমাধান হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, যেই লাউ সেই কদু’র মতো অবস্থা। পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে আর কারো কোন খবর নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড সেই আগের মতোই তাদের গতানুগতিক কাজ করছেন। এতে জনগণের উপকারের চেয়েও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাভবান বেশী হয়েছেন বলে দাবী ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর।
অভিযোগ রয়েছে. বিগত দিনে একের পর এক বন্যা ও বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়ে ঘরবাড়ি-সহায় সম্পদ হারা হয়ে চরমভাবে বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়েন জকিগঞ্জ উপজেলার অসংখ্য পরিবার। চলতি বর্ষায় পুনরায় ভাঙ্গনের শিকার হলে এলাকার হাজার হাজার মানুষ চরম বিপাকে পড়বে। হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল ও মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গিয়ে মানুষের জীবনে অন্ধকার নেমে আসবে। এমতাবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধ সময়ের দাবি বলে জানিয়েছেন সিলেটের সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলের মানুষ।
এ ব্যাপারে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন স্থানে ফাঁটল দেখা দেয়ায় আমরা তাৎক্ষণিক পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করেছি। রোববার আমলশীদ বরাক মোহনা ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকা ঘুরে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। বন্যা মোকাবেলায় আমরা উপজেলায় বন্যা কন্ট্রোল রুম চালু করেছি এবং ৫৭টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জকিগঞ্জের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান ভূইয়া জানান, অধিক বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার দুই সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই কুশিয়ারা নদীর বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে রোববার পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী দিপক রঞ্জন স্যার সরেজমিন পরিদর্শন করে দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
Leave a Reply