তারুণ্যের দীপ্তিমান এক শক্তির নাম মানবিক জুনেদ আহমদ চৌধুরী। জকিগঞ্জ উপজেলার কসকনকপুর ইউনিয়নের নিয়াগুল গ্রামের এই তরুণ একজন সাংবাদিক হলেও মূল টার্গেট বেওয়ারিশ মানুষের জন্য কাজ করা। সিলেট নগরীতে সাংবাদিকতার ফাঁক দিয়ে পথে-প্রান্তরে, হাট-বাজারে কিংবা অন্য কোথাও পড়ে থাকা বেওয়ারিশ ও ভবঘুরে মানুষদের তিনি খোঁজে বেড়ান। রাস্তা-ঘাটে গরীব-অসহায় মানুষদের দেখলেই সামান্য কিছু হলেও সহযোগিতা নিয়ে কাছে যাওয়াই যেন তাঁর নেশা। ফেসবুকে “Manusher Jonno – মানুষের জন্য” নামে পেইজ খোলে এসব কার্যক্রম প্রচার করতে থাকেন। দেশ-বিদেশ থেকে এসব ভিডিও দেখে অনেকেই তাকে অনুপ্ররেণা দিতে শুরু করেন। এরপর থেকে তিনি বেশ উদ্দীপনা ও অদম্য শক্তি নিয়ে অপ্রতিরোধ্য দৃপ্ত শপথে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস নিয়ে মানবতার কাজে জড়িয়ে পড়েন। শখ জাগে সিলেটের পথে-প্রান্তরে, হাট-বাজারে কিংবা অন্য কোথায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য বেওয়ারিশ ও ভবঘুরে মানুষকে নিয়ে কাজ করার। তিনি এসব বেওয়ারিশ মানুষদের অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থানের জন্য উঠে পড়ে লাগেন। কিন্তু এসকল কাজ করতে যে প্রয়োজন হয় বিশাল অর্থের, তা তো উনার নেই। তাই এমন একটি মহৎ কাজের কথা জানিয়ে “Manusher Jonno – মানুষের জন্য” ফেসবুক পেইজে সামর্থ্যবানদের সহযোগিতা কামনা করেন। তাঁর এমন স্থায়ী মানবিক কাজে প্রথমেই আশার আলো হিসেবে সামনে চলে আসেন জকিগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রী ইউনিয়নের পশ্চিম জামডহর গ্রামের লন্ডন প্রবাসী গোলাম মরতুজা চৌধুরী ইকবাল দম্পতি। তাঁরা নিজেদের বাসা করার ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ১০ ডেসিমেল জায়গা বেওয়ারিশদের থাকার ঘর নির্মাণের জন্য দান করার ঘোষণা দেন। অথচ সিলেটের প্রবাসীদের একটি স্বপ্ন থাকে গ্রামের বাড়ির পাশাপাশি শহরে একটি আলিসান বাসা নির্মাণের। সেই স্বপ্ন থেকে সিলেট এয়ারপোর্ট এলাকার নয়াবাজারের নেছারাবাদ হাউজিং এ কিনেছিলেন এক খণ্ড জমি। স্বপ্ন ছিল একটি বাসা বানানোর। উদ্দেশ্য, লন্ডন থেকে দেশে আসা যাওয়ার সময় এই বাসা থেকেই দ্রুত বিমানবন্দর যাতায়াত করা। কিন্তু সিলেটে রাস্তায় পড়ে থাকা বেওয়ারিশ মানুষদের নিয়ে কাজ করা “মানুষের জন্য” ফেসবুক পেইজের এক লাইভে বাসা বানানোর স্বপ্ন পাল্টে দিল লন্ডন প্রবাসী গোলাম মরতুজা চৌধুরী ইকবাল দম্পতির। সেই লাইভে ছিল, কোন দয়াবান একখণ্ড জমি দান করলে সিলেটে বেওয়ারিশ মানুষদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল গড়ে তুলব। জকিগঞ্জের কৃতি সন্তান, লন্ডন প্রবাসী ইকবাল ভাইয়ের স্ত্রী সেই লাইভটি দেখছিলেন সেদিন। বিকেলেই জুনেদ আহমদ চৌধুরীকে ফোন করে জানালেন, নেছারাবাদে তোমার ভাবীর নামে ১০ ডেসিমেল জায়গা আছে, মানে জায়গাটি উনার স্ত্রীর নামে। বাসা বানানোর জন্য জায়গাটি রেখেছিলেন। জায়গাটি পছন্দ হলে সেখানেই বেওয়ারিশদের জন্য ঘর বানিয়ে কাজ শুরু করে দাও। কথামত এক বিকেলে জায়গাটি দেখতে যান জুনেদ আহমদ চৌধুরী। খুবই প্রাইম লোকেশন, তাঁর পছন্দ হয়েছে জানালেন।
জুনেদ আহমদ চৌধুরী জানান, দেশের বিভিন্ন শহরে বেওয়ারিশ মানুষের জন্য আশ্রয়স্থল থাকলেও প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই। সিলেটের রাস্তাঘাটে প্রায়শই কাপড় বিহীন, উলঙ্গ কিংবা অর্ধউলঙ্গ বেওয়ারিশ নারী-পুরুষের দেখা মেলে, যারা অসুস্থ হয়ে বা পঁচে গলে মারা যায়। এবার এই বেওয়ারিশ মানুষগুলোর জন্য স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও জানান, গত বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) তাদের স্বেচ্ছাসেবী টিম সেখানে গিয়ে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে এসেছে। আগামী জানুয়ারি মাসে এই জায়গায় তাঁরা ঘর বানাতে চান। এটি বাস্তবায়ন করবে জীবন ফাউন্ডেশন। প্রয়োজন অনেক টাকা। কিন্তু তাদের হাত একবারে শূন্য। তাদের বিশ্বাস সিলেট তথা দেশের মানুষ এবং প্রবাসীরা খালি হাতে তাদের ফিরিয়ে দেবেন না।
Leave a Reply