1. admin@zakiganjsangbad.com : admin :
শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ০১:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
জকিগঞ্জের পানিবন্দি মানুষের আকুতি: ত্রাণ নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই! জকিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি: ডাইক রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা এলাকাবাসীর জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে ফাহিম আল চৌধুরী ট্রাস্টের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত জকিগঞ্জে ভেঙে গেছে কুশিয়ারা ডাইক: পানিতে তলিয়ে গেছে জকিগঞ্জ শহর! জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর বেড়িবাঁধে ফাটল: আতঙ্কিত উপজেলাবাসী জকিগঞ্জে সাড়ে তিন বছর পর চেয়ারম্যান হচ্ছেন বিএনপি নেতা হাসান আহমদ জকিগঞ্জের মাওলানা ক্বারী খলিলুর রহমান পবিত্র ওমরাহ পালনে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মক্কায় ইন্তেকাল জকিগঞ্জে চালের ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা বিক্রি করতেন ময়নুল! উচ্চ আদালতের রায়ে দায়িত্ব ফিরে পেলেন জকিগঞ্জের ৬নং সুলতানপুর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জকিগঞ্জের ট্রাক চালক হারিছ আহমদের মর্মান্তিক মৃত্যু

জকিগঞ্জের পানিবন্দি মানুষের আকুতি: ত্রাণ নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই!

রহমত আলী হেলালী
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৪ জুন, ২০২৫
  • ৬৩ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

সিলেটে বিগত এক সাপ্তাহের ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানী ঢলে কুশিয়ারা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে পড়েছে জকিগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ২৫/৩০টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ।
বুধবার (৪ জুন) বন্যা কবলিত এসব এলাকায় গেলে “এবার ত্রাণ নয়, টেঁকসই বেড়িবাঁধ চাই’ বলে নিজেদের দাবী জানান এলাকাবাসী।
তাদের মতে, প্রতিবছর বন্যার পর উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে কিছু ত্রাণসামগ্রী এলেও এরপর আর কোন খোঁজ থাকেনা। জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণই থেকে যায়। এমনকি এক শ্রেণীর অসাধু জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদাররা বাঁধ মেরামতের নামে লাখ লাখ টাকা লুটপাট করেন। কয়েকশত বছরের পুরাতন বেড়িবাঁধ দেশ স্বাধীনের পর থেকেই এভাবে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। এই কারণে ভারী বৃষ্টিপাত দেখলেই আঁতকে উঠেন জকিগঞ্জের মানুষ। জকিগঞ্জবাসী বৃষ্টিকে ভয় পায় না, ভয় পায় বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়াকে। এত প্রতিকূলতার মাঝেও মানুষ স্বপ্ন দেখে তাদের পিতৃভূমিতে বসবাস করার। এ উপজেলার মানুষ এখন আর ত্রাণ চান না, তাদের একমাত্র চাওয়া টেঁকসই বেড়িবাঁধ। তাই অবিলম্বে জকিগঞ্জ উপজেলাবাসীর নিরাপদ জীবন যাপন নিশ্চিত করতে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জোর দাবী জানান এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা লোকজন জানান, সেই ছোটকাল থেকে প্রায় প্রতিবছর ছোট বড় অনেক বন্যার সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার মানুষের। শুষ্ক মৌসুমেও নিরাপদে থাকতে পারেন না কুশিয়ারা নদী পারের হাজার হাজার পরিবার। প্রতিনিয়ত অব্যাহতভাবে ভাঙছে সীমান্ত নদী কুশিয়ারার বেড়িবাঁধ। সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় প্রতিনিয়ত থাকতে হয় নদী তীরবর্তী মানুষজন। কুশিয়ারা নদীর বেড়িবাঁধ হচ্ছে পুরো বাংলাদেশের মানচিত্রের রক্ষাকবচ। নদী পারের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা প্রহরী। অথচ বাঁধগুলো কখনোই টেঁকসইভাবে সংস্কার করা হয় না। টেঁকসই বেড়িবাঁধ স্থাপিত হলে যত বড় বন্যা হোক না কেন জকিগঞ্জবাসী অন্তত নিরাপদে বাঁচার নিশ্চয়তা পাবে। রক্ষা হবে বাংলাদেশের মানচিত্র। অথচ ২০২২ সালে পরপর দু’টি বড় বন্যা ও ২০২৪ সালের বন্যার পরও একটুও টনক নড়েনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। প্রতি বছর বন্যা আসার পূর্বে শোনা যায় কোটি কোটি টাকার বরাদ্ধ এসেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে বলে দেখা যায় না। ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে কুশিয়ারা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
জানা যায়, জকিগঞ্জে এবারের বন্যার পানি গত সোমবার থেকে হু হু করে বাড়তে থাকায় বন্যা কবলিত এলাকার পানিবন্দি মানুষের দূর্ভোগের শেষ নেই। বসতঘরে পানি ওঠায় হাজার হাজার বাসিন্দা চরম দূর্ভোগে রয়েছেন। প্রবল স্রোতে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করায় অনেক কাঁচা ঘর ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত তিন দিন থেকে পানি না সরায় স্থানীয় বাসিন্দাদের বসতঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ গাছপালা, ক্ষেত-কৃষি, মৎস্য খামার ও সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। পানির প্রবল স্রোতে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুশিয়ারা নদীর বেড়িবাঁধে এলাকার লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে বাঁধ রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। কোথাও কোথাও পানি উন্নয়ন বোর্ড বস্তা দিয়ে সহায়তা করলেও এলাকাবাসীকে সরকারি কোন অনুদান প্রদান করেননি। তারপরও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। পানিবন্দি হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠা পরিবার সমূহের মধ্যে পর্যাপ্ত খাদ্য ও সুপেয় পানির অভাব রয়েছে। তবুও তারা ত্রাণ চান না, তারা টেঁকসই বাঁধ নির্মাণ দেখতে চান।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা স্বশরীরে বন্যা কবলিত এলাকা দেখতে এসেছেন। সোমবার বন্যার প্রথম দিনেই জামায়াতে ইসলাম মনোনীত এমপি প্রার্থী মাওলানা আনোয়ার হোসাইন খাঁন ও খেলাফত মজলিস মনোনীত এমপি প্রার্থী মাওলানা মুফতি আবুল হাসান দেখতে আসেন। পরদিন মঙ্গলবার বন্যা কবলিত এলাকা দেখতে আসেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মামুনুর রশীদ চাকসু মামুন। সর্বশেষ বুধবার দেখতে আসেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মনোনীত এমপি প্রার্থী মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক।
এ সময় বন্যা কবলিত লোকজন তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে সরকারের কাছে টেঁকসই বাঁধ নির্মানের দাবী জানান।
মাদারখাল গ্রামের নাজমা বেগম জানান, এমন বন্যার পানি আমার জীবনে দেখছি না, এত পানি অইছে! কুশিয়ারা গাঙ্গের পানি ডাইক ভাঙ্গিয়া হামাইয়া আমার ঘরটা ভাসাইয়া লইয়া যারগি। আমার ঘর ভাঙ্গিলে আমি বউ-হরুতা লইয়া কই থাকমু। আমরা ত্রাণ চাই না, চাই শক্ত বেড়িবাঁধ।’
শেখপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘বন্যার পানিয়ে বান ভাঙ্গিয়া পানি হামাইয়া ঘরটা শেষ করি গেছে। এখন কই থাকমু?’
কাপনা গ্রামের আমিন মিয়া বলেন, বন্যায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের অধকাংশ ঘর ডুবে যাওয়ায় কাঁচা ঘরের ক্ষতি হয়েছে। নতুন করে বাঁধ না দিলে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাস করা যাবে না। সরকারের কাছে  ত্রাণ সহায়তা নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানাই।
কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী খলাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হক বলেন, ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে বেড়িবাঁধ ভেঙে তাঁর এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জনসাধারণকে রক্ষায় সরকারের কাছে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
জকিগঞ্জ সংবাদ-এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
প্রতিষ্ঠাতা: রহমত আলী হেলালী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায় সিসা হোস্ট