সিলেট জেলা শহর থেকে প্রায় একশত কিলোমিটার দূরবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলার একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটে চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। এখানে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তিন লক্ষাধিক মানুষের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র তিনজন চিকিৎসক। ৩১ শয্যার এই হাসপাতালটি প্রায় একযুগ পূর্বে ৫০ শয্যা অনুমোদিত হলেও লোকবলের অভাবে আজও ৫০ শয্যায় হাসপাতালটির কার্যক্রম চালু হয়নি। তাই যুগযুগ থেকে ৩১ শয্যার হাসপাতালের জনবল দিয়ে কাজ চলছে জকিগঞ্জ উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ফলে প্রতিনিয়ত চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষকে।
জানা যায়, বিদ্যমান ৩১ শয্যা হাসপাতালের জনবল কাটামো অনুসারে হাসপাতালে মোট পদ সংখ্যা ১৯৮ টি, শূন্য রয়েছে ৭১টি, সংযুক্তিতে রয়েছে ৪ জন কর্মকর্তা, প্রেষণে ২ জন, দীর্ঘদিন থেকে অননুমোদিত অনুপস্থিত ৭ জন নার্সিং কর্মকর্তা। ৩১ শয্যা হাসপাতালের জনবল কাটামো অনুসারে উপজেলার মোট চিকিৎসক পদ সংখ্যা ২০ জন। পদায়িত আছেন ৭ জন, তন্মধ্যে ৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংযুক্তিতে অন্যত্র কর্মরত। বাস্তবে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনকারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্যতীত বর্তমানে মোট চিকিৎসক সংখ্যা ৩ জন। ৩ জন চিকিৎসক দিয়েই সপ্তাহের ৭ দিন সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। নার্সিং ও মিডওয়াইফের পদসংখ্যা ৩২টি, বাস্তবে কর্মরত ১১ জন। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কর্মীর পদ সংখ্যা ৫টি, কর্মরত ৩ জন। ৪ বছর থেকে পড়ে থাকা অতি পুরনো অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘদিন পরে সচল হলেও অতি ঘন ঘন মেরামত করতে হয়। হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার রয়েছে কিন্তু বিশেষজ্ঞের অভাবে অপারেশন থিয়েটার অকার্যকর হয়ে রয়েছে। এতে করে অপারেশন থিয়েটার সংশ্লিষ্ট অনেক মূল্যবান চিকিৎসা সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্ত:বিভাগে ৩১ জন রোগীর জন্য বেড থাকলেও প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি থাকে। জরুরি বিভাগ থেকে প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ জন রোগী জরুরী চিকিৎসা সেবা নেয়। হাসপাতালের বহিবিভাগের প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ সাধারণ রোগী সেবা নিতে আসেন। হাসপাতালে তিনটি বিভাগে আগত এই বিশাল সংখ্যক রোগীদের কর্মরত মাত্র ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে সন্তুষ্ট জনক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালের বহিঃবিভাগে রোগীদের উপস্থিতি অনুযায়ী ঔষধ সামগ্রী একে বারে অপ্রতুল। হাসপাতালে আগত রোগী এবং দর্শনার্থীর তুলনায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীর স্বল্পতায় হাসপাতালটি প্রায়ই অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্ন দুর্গন্ধযুক্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের তৈরি হয়। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ রোগীদের সুস্থতার পরিবর্তে রোগ আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিকস, ল্যাব-টেকনিশিয়ানসহ নানা পদে সংকটের কারণে আগত রোগীর দুর্ভোগ বাড়ছে। কেউ সেবা পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না। ডিউটি টাইমে ডাক্তারের অনুপস্থিতি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, রোগীর দেখভালে নার্সদের অবহেলা, ওয়ার্ডবয়দের দিয়ে নার্সের কাজ চালিয়ে নেওয়া, নিম্নমানের খাবার সরবরাহসহ নানা অভিযোগে ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত সাধারণ মানুষের ভরসার কেন্দ্র জকিগঞ্জ সরকারি হাসপাতাল। হাসপাতালের প্রবেশ গেট থেকে শুরু করে কেবিন ও বেড পর্যন্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা আবর্জনা।
তাই এ বাস্তবতায় সরকারি হাসপাতালের আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবি। বাজেট বৃদ্ধি, চিকিৎসক সংকটের সমাধান এবং শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ, অচল যন্ত্রপাতি মেরামত এবং যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ জনবল, ল্যাব পরিচালনাকারী এবং টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেয়ার দাবি জকিগঞ্জবাসীর।
সচেতন মহলের মতে, স্বাস্থ্য খাতে যদি অবিলম্বে যথাযথ সংস্কার না করা হয়, তাহলে জকিগঞ্জ উপজেলার সামগ্রিক উন্নতি সোনার হরিণের মতো অধরাই রয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়দের জবাবদিহিতার আওতায় আনা দরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.এস এম আব্দুল আহাদ চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী সংকটসহ নানা সমস্যার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি একাধিকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা অনকটা ব্যাহত হচ্ছে।
আশা করি, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জেলা শহর থেকে সবচেয়ে দুরবর্তী একমাত্র সরকারি হাসপাতালের বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিবেন।
Leave a Reply