বিগত ৩ দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে শেষ রক্ষা হয়নি সিলেটের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলাবাসীর। কুশিয়ারা নদীর ৩টি স্থানে ভাঙন ও ডাইক উপচে চারিদিকে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। রাতজেগে পাহারা ও নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েও ডাইক রক্ষা করতে ব্যার্থ হয়েছেন এলাকাবাসী। মাত্র ৬ ঘন্টার ভিতরে ৩টি স্থানে ভাঙন ও ২৫/৩০টি স্থান দিয়ে পানি উপচে আসায় প্লাবিত হতে শুরু করেছে একের পর এক গ্রাম।
সোমবার (২ জুন) বিকাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জকিগঞ্জ উপজেলার ৩টি স্থানে নদীর ডাইক (নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ) ভেঙে হু-হু করে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এছাড়াও জকিগঞ্জের ২৫/৩০টি স্থানে নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে জকিগঞ্জ পৌরসভা, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ও খলাছড়া ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী ২/৩টি ইউনিয়নের ১৫/২০টি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামের পাশ দিয়ে প্রথমে ডাইক ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করে। এরপর সোমবার ভোরে বাখরশাল এবং সকাল ৮টার দিকে খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল এলাকায় আরও একটি ডাইক ভেঙে যায়। এতে প্রবল স্রোতে পানি লোকালয়ে ঢুকে একের পর এক গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।
এছাড়াও জকিগঞ্জ পৌরশহরসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে কুশিয়ারা নদীর ডাইক উপচে পানি ঢুকছে। উপচে পড়া পানিতে তলিয়ে গেছে জকিগঞ্জ পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র জকিগঞ্জ বাজার। টানা বৃষ্টিপাত ও কুশিয়ারা নদীর উপচ আসা পানিতে জকিগঞ্জ শহর পরিণত হয়েছে এক বিশাল জলাধারে। হাঁটুসমান পানিতে তলিয়ে গেছে শহরের প্রধান সড়ক ও বাজার এলাকা। জনদুর্ভোগ এখন চরমে, স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দোকানে পানি ঢুকে ব্যবসায়ীরা পড়েছেন ব্যাপক ক্ষতির মুখে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জকিগঞ্জ উপজেলার বারঠাকুরী ইউনিয়নের পিল্লাকান্দি, আমলশীদ, বীরশ্রী ইউনিয়নের সুপ্রাকান্দি, লক্ষীবাজার, সুলতানপুর ইউনিয়নের ইছাপুর, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ছবরিয়া, সেনাপতিরচক, জকিগঞ্জ পৌরসভার কেছরী ও মাইজকান্দি সহ খলাছড়া ইউনিয়নের একাধিক স্থানে কুশিয়ারা নদীর ডাইক উপচে পানি ঢুকছে। এতে অনেকের বাড়ি-ঘর ও ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জকিগঞ্জের দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান ভূইয়া জকিগঞ্জ সংবাদকে বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার ৮ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে কুশিয়ারা নদীর ৩টি স্থানে ভেঙে গেছে এবং বেশ কিছু স্থান দিয়ে ডাইক উপচে পানি ঢুকছে।
এ বিষয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রশাসন সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। বন্যা কবলিত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশল দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, সুরমা-কুশিয়ারা বেশ কয়েকটি স্থনে রোববার ফাঁটল দেখা দেয়। সোমবার ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়েছি। আমাদের লোকজন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। যেখানে ফাঁটল দেখা দিয়েছে, সেগুলো যাতে না ভাঙে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
Leave a Reply