ইংল্যাণ্ড থেকে বাফুফের অনুর্ধ্ব-১৯ ফুটবল দলের ট্রায়ালে এসে নিজ পৈতৃক নিবাস সিলেটের জকিগঞ্জবাসীর নজর কেড়েছেন তরুণ ফুটবলার মোঃ মুসা আল গণি। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুণ ‘মুসা’ ২৭ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) তিন দিনের “নেক্সট গ্লোবাল স্টার”-এ জাতীয় স্টেডিয়ামে অংশ নিয়ে নিজেকে প্রমাণের পরীক্ষায় মুখোমুখি হয়েছিলেন। আধুনিক ফুটবলের ছোঁয়ায় বেড়ে ওঠা ‘মুসা’ বিশ্বের ১৪টি দেশ থেকে আসা ৫২ জন ফুটবলারের মধ্যে আলাদাভাবে নজর কেঁড়েছেন। গতি, স্কিল, খেলার ধরণ, শারীরিক গঠন-সবমিলিয়ে নিজেকে প্রমাণের মঞ্চে প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন ভালোভাবে। ঠিকভাবে সুযোগ আর পরিচর্যা পেলে মুসা হতে পারেন আগামী দিনের তারকা ফুটবলার। সে কারণে তাকে নিয়ে আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন দেখছেন সিলেটের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জবাসী।
তিন দিনের “নেক্সট গ্লোবাল স্টার” ট্রায়াল শেষে গত ১লা জুলাই সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মোঃ মুসা আল গণি যখন পৌছান, তখনই চমকে উঠেন। তাকে রিসিভ করতে সেখানে জড়ো হন নিজ এলাকার শতাধিক যুবক ও তরুণ। বিমানবন্দরে ফুলেল শুভেচ্ছায় তাকে সিক্ত করেন নিজ এলাকার তরুণ ও যুবকরা। তাদের একটাই কথা মুসা আমাদের আগামীর তারকা ফুটবলার। তাকে নিয়েই আমরা আগামীর আকাশ ছুঁয়া স্বপ্ন দেখি। এভাবে তরুণ ফুটবলার ‘মুসা’কে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন জকিগঞ্জবাসী। নিজ এলাকায় আসার পরদিন বুধবার (১ জুলাই) স্থানীয় বাবুর বাজারের ব্যবসায়ীরা তাকে গণ সংবর্ধনা প্রদান করেন। তাকে উপহার প্রদান করেন জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ মাহবুবুর রহমান। শুক্রবার (৪ জুলাই) নিজ গ্রাম ইছাপুরে সংবর্ধনা প্রদান করেন এলাকাবাসী। সন্ধ্যায় সংবর্ধনা প্রদান করে স্থানীয় জামায়াতে ইসলামী। এতে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন তরুণ ফুটবলার মুসা আল গণি।
মুসা বলেন, বাংলাদেশ আমার এক হাত আর ইংল্যাণ্ড আমার অপর হাত। বাংলাদেশের হয়েই আগামীতে থাকতে চাই। বাংলাদেশের মানুষের এমন ভালোবাসা কখনো ভূলার নয়। তিনি আরও বলেন, আপনাদের মতো আমারও ফুটবলে আকাশ ছুঁয়ার স্বপ্ন রয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া ও পাকিস্তান ভালো খেলতে পারে। আমরা কেন ভালো খেলতে পারবো না। আমরা আগামীতে ফুটবলে পুরো বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই।
জানা যায়, সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার ৬নং সুলতানপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত সীমান্ত ঘেষা ইছাপুর গ্রামে মোঃ মুসা আল গণি’র পৈতৃক নিবাস। তিনি বাবা মোঃ আশরাফ গণি আবু ও মা শাহানা বেগম সহ ছোট দুই ভাই মোঃ ঈসা আল গণি ও মোঃ বিনিয়ামিন আল গণি-কে নিয়ে ইংল্যাণ্ডের ব্র্যাডফোর্ড শহরে বসবাস করেন। সেখানকার একটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ালেখার পাশাপাশি পবিত্র কুরআনের তিনি ১৮ পারা মুখস্ত করেছেন। ১৬ বছরের এই তরুণ ফুটবলার ইংল্যাণ্ডে ইউএফসিএ নামের একটি ফুটবল দলে খেলেন।
ফুটবলার মোঃ মুসা আল গণি-কে নিয়ে তার বাবা মোঃ আশরাফ গণি আবু’র প্রত্যাশা অনেক। তিনি মনে করেন, তাঁর ছেলে পড়ালেখার পাশাপাশি একদিন হয়ে উঠবে বিশ্বসেরা ফুটবলার। তিনি সেই ছোটকাল থেকে মুসা-কে ফুটবলের প্রতি উৎসাহ ও অনুপ্ররেণা দিয়ে আসছেন। তিনি পড়ালেখা ও ফুটবলের পাশাপাশি ছেলেকে একজন ভালো হাফিজে কুরআন হিসাবেও দেখতে চান। যাতে তিনি মারা গেলে ছেলে যেন জানাজা পড়তে পারেন।
এলাকার ফুটবল প্রেমী একাধিক যুবক জানান, জাতীয় স্টেডিয়ামে ট্রায়ালে মুসা আল গণি’র কুইক পাসিং, ড্রিবলিং, বুদ্ধিমত্তা আর বল কন্ট্রোল দেখে আমরা অভিভূত হয়েছি। তিনি বল ক্লিয়ারেন্স, বডি চেক, গতিময় ফুটবল আর মাঝ মাঠে বল সাপ্লাইয়ে ভালো দক্ষতা দেখিয়ে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন।
জকিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি রহমত আলী হেলালী বলেন, স্বপ্ন যখন তারুণ্যের, স্বপ্ন হওয়া চাই আকাশ ছোঁয়া, বিশ্ব জয়ের। সেই স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে চলছে আমাদের জকিগঞ্জেরই সন্তান মুসা আল গণি। আমরা তাঁর সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা করি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, সে আমাদের এখানে এসেছিল। মুসা আমাদের গৌরব। আমরা খুবই খুশি। ভবিষ্যতে সে বাংলাদেশ ফুটবলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী। আমি তার সফলতা কামনা করি।
Leave a Reply