প্রকৃতিতে এখন ভরা কার্তিক। হেমন্তের ভোরে শিশির সিক্ত দূর্বাঘাস ও পথঘাট। মুক্তোদানার মতো জ্বলজ্বল করছে সূর্যের আলোতে। জনপদগুলো সকাল-সন্ধ্যায় ঢেকে যাচ্ছে কুয়াশার চাদরে। অকস্মাত্ শিরশিরে উত্তরে হাওয়া জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। প্রতিদিন বাড়ছে শীতের আমেজ। এরই মধ্যে সিলেটের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলায় ধীরে ধীরে জেঁকে বসছে শীত। দিনে রোদের তাপ থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকেই কুয়াশা পথঘাটে পড়তে দেখা যাচ্ছে। রাত বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে কুয়াশার গাঢ়ত্ব। কুয়াশার চাদর ফুঁড়ে উঁকি দিচ্ছে প্রভাতের সূর্য। ঋতু পরিক্রমায় ধীরে ধীরে শীতের আগমন ঘটছে।
উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তদের কাছে শীতের দিন মানে উৎসবের সময়। কিন্তু নিম্নবিত্ত এবং সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য এই শীত নিয়ে আসে এক ভয়াবহ দুর্ভোগ। গৃহহীন মানুষ, পথশিশুদের কষ্টের কোনো শেষ থাকে না শীতকালে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য যথাযথ সময়ে চেষ্টা করা। তাহলে হয়তো এই শীতার্ত মানুষ গুলো কষ্ট কিছুটা কমে আসবে।
সড়কের পাশে ও বাজার-ঘাটে রাতের বেলা অনেক অসহায় মানুষকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। আমরা যখন লেপ-কম্বল গায়ে জড়িয়ে দীর্ঘ রাত সুখ নিদ্রায় বিভোর তখন তাদের রাত কাটে নির্ঘুম অবস্থায় শীতের প্রকোপে জবুথবু হয়ে। যার পেটে ভাত নেই তার গায়ে গরম কাপড় জুটবে কোত্থেকে! আমরা কি পারি না তাদের সাহায্যে একটু এগিয়ে আসতে?
সমাজের অসহায় ও শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব। অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসার মাধ্যমেই রচিত হবে মানবিক সেতুবন্ধন। আমাদের সামান্য সহযোগিতা তাদের জীবনে এনে দিতে পারে এক টুকরো সুখ।
কনকনে শীতে ঠকঠক করে কাঁপা মানুষের গায়ে শীতবস্ত্র জড়িয়ে তার মুখে হাসি ফোটানোর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। এর মাধ্যমে প্রকাশ পায় মানুষের প্রতি আমাদের মমত্ব ও ভালোবাসার। আমরা চাইলেই এ সকল দুঃখী মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারি। এর জন্য কি অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হওয়া প্রয়োজন? মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকেরাও করতে পারেন অনেক কিছু। এ সকল অসহায়দের প্রতি তাদেরও রয়েছে কিছু নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের উপার্জিত অর্থের সামান্য পরিমাণও যদি এ সকল অসহায়দের জন্য আমরা বরাদ্দ করি তাহলে বিন্দু বিন্দু সে দান শীতার্তদের কষ্ট লাঘবে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে।
আমরা প্রায়ই দেখি, প্রতি বছর শীত মৌসুমে কিছু কিছু সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন ছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই শীতার্ত মানুষের পাঁশে দাঁড়ান। গরীব, অসহায় ও দারিদ্র মানুষকে মুক্ত হস্তে সহযোগিতার করে থাকেন। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
তবে আমরা চাই, অত্যন্ত মানবিক এই কাজটি যেন যথাযথ সময়ে করা হয়। শীত মৌসুমের শুরু থেকে মৌসুমের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমরা কাউকে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখিনা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শীতের মাঝামাঝি সময় পার হওয়ার পর থেকে শীতের শেষ অবধি আমরা কম্বল বা শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখি।
আমরা মনে করি, আমাদের এ বিষয়ে আরও সচেতন ও সজাগ হওয়া দরকার। কেননা শীত মৌসুমের অর্ধেক সময় মানুষ শীতে কষ্ট করার পর বাকি অল্প সময় এর জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করে লাভ কি? তাই এবারের শীতে শুরুতে যথাযথ সময়ে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ রইল।
Leave a Reply