বিগত বছরে পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে কয়েকজন মিলে কুরবানি দিয়েছেন। অনেকে আবার আত্মীয়স্বজনদের দেওয়া কুরবানির গোশত দিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছেন। কেউ সাধ্যের মধ্যে নতুন জামাকাপড় কিনেছেন। কেউ আবার মেয়ে জামাইকে দাওয়াত করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। জকিগঞ্জের বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা শতাধিক নারী-পুরুষ ঈদের দিনে ঠিক কী করবেন তা ভেবেই পাচ্ছেন না। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় অনেকের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র এমনকি জামাকাপড়ও ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষদের সবার কষ্ট নিয়ে এবার ঈদ কাটছে। ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে বাড়িঘরে ফিরলেও গত বছরের মতো ঈদ আনন্দ করতে পারছেন না।
এবারের বন্যায় সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৫টি ইউনিয়নের ২৫/৩০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের বাড়িঘর থেকে পানি নামলেও নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় এখনো পানিবন্দি কয়েক হাজার মানুষ।
শনিবার (৭ জুন) ঈদের নামাজ শেষে জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের ঈদগাহ বাজার আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সবার মুখে কষ্টের ছাপ। ঈদের দিনে ভালো কিছু খাবেন এমন কোন ব্যবস্থা নেই। তবুও যার যার সাধ্যমত অস্থায়ী চুলার উপর বসিয়েছেন হাড়ি পাতিল। ঈদের একটি আনন্দঘন দিনে ঈদ উদযাপনের কোনো চিন্তা কারও মাথায় নেই। কোনো রকমে দুই বেলা খেয়ে দিন পার করার চিন্তা বানভাসি এসব মানুষের।
আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ধলিগাও গ্রামের জামিল আহমদ বলেন, বন্যার পানি বসতঘরে উঠে ঘরের বেড়া ভেঙে ফেলেছে। তাই তাদের পরিবারের সবাইকে ঈদ করতে হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে।
একই গ্রামের ফয়জুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত উনার বসতঘরে পানি। ঘরের ভিতর পলিমাটি ঢুকে সবকিছু নষ্ট করে দিয়েছে। বয়োবৃদ্ধ ফয়জুর রহমান ঈদ আনন্দ নয়, কিভাবে তিনি বাড়ি ফিরবেন তা নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন।
পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের কামাল উদ্দিন জানান, ৪৪ বছর বয়সে এই প্রথম তিনি বাড়ির বাহিরে আশ্রয়কেন্দ্রে ঈদ কাটাচ্ছেন। নিজের বসতঘরে ঢুকার কোন উপায় নেই। সর্বনাশী এ বন্যার কারণে ভিটেমাটি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দে ঈদ পালন করতে হচ্ছে বলেই তার যত আক্ষেপ।
ধলিগ্রামের বিধবা সুনিয়া বেগম বলেন, ঈদ বলতে আমাদের মাঝে কিছুই নাই। একটি সন্তান নিয়ে চরম বিপাকে আছি। ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাড়িতে যেতে পারছিনা। আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে এবার ঈদে আর গোশত খাওয়া হবে না। বাড়িতে থাকলে গ্রামের লোকজন কুরবানির গোশত দিত। আশ্রয়কেন্দে কে দেবে? আর গ্রামে এখনো পানি। এ পানির মধ্যে কুরবানিইবা কে দেবে?
আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের আফিয়া বেগম বলেন, তাদের ৬ সদস্যের পরিবারে রোজগার মাত্র এক ব্যক্তি। এবারের বন্যায় তাদের বসতঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় প্রবল স্রোতে ঘর হারিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। তাই ঈদে বাড়িতে যেতে পারেননি পরিবারের কেউই। তাদের ঈদ মানে আশ্রয়কেন্দ্রে বসে দিন অতিবাহিত করা।
ধলিগাও গ্রামের মুজিবুর রহমান বলেন, ঈদে তো বাড়ি ফিরতে পারেননি। কবে ফিরতে পারবেন তাও বলতে পারছেন না। বসতঘর নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমারা আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকদের জন্য সকালে খাবার পাঠিয়েছি। যেটুকু সরকারি বরাদ্ধ পাচ্ছি তাৎক্ষণিক তা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছি।
Leave a Reply