ফেসবুক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল কিংবা পত্র-পত্রিকার পাতায় প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র দেখছি আমরা। প্রায় প্রতিদিন শুধু জকিগঞ্জ নয়, সিলেট তথা দেশের কোনো না কোনো জায়গায় ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। আর সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে মোটর সাইকেল। এই যন্ত্রদানব প্রাণ কেড়ে দিচ্ছে নারী, শিশু প্রাপ্তবয়স্কদের বিশেষ করে তরুণদের। আর মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার হার এবং মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে।
জকিগঞ্জ সংবাদ থেকে প্রাপ্ত সংবাদ সূত্রে দেখা গেছে, গত ৯ মাসে শুধু জকিগঞ্জেই সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮জন মারা গেছেন। তন্মধ্যে মোটর সাইকেল দূর্ঘটনায় ৫/৭ জন মৃত্যু বরণ করেন।
তুলনামূলক সহজলভ্য এবং অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় সহজে যাতায়াত করা যায় বলে অনেকেই মোটর সাইকেল ক্রয় করছেন। তাই দিন দিন সড়কে বাড়ছে মোটর সাইকেলের সংখ্যা, সেই সঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনার হার। সড়কে এত মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে বলা যায়, সড়কে বেপরোয়াভাবে চলাচল, ট্রাফিক আইন না মানা, অতিরিক্ত গতি, লাইসেন্স না থাকা এবং পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না থাকা। সাধারণত ১৮ বছর বয়স থেকেই মোটর সাইকেলের লাইসেন্স দেওয়া হয় বলে অনেক তরুণকে মোটর সাইকেল চালাতে দেখা যায়। স্কুলের অনেক ছাত্রকেও মোটর সাইকেল চালিয়ে ক্লাস করতে আসতে দেখা যায়, যাদের অধিকাংশই জানে না সঠিক ট্রাফিক নিয়ম, অনেকের নেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, নেই কোনো লাইসেন্স। মোটর সাইকেল চালানোর সময় অধিক যাত্রী বহন করে, এমনি অনেকে হেলমেট ব্যবহার করে না। ছোট যান হওয়ার কারণে কোথাও ট্রাফিক পুলিশকে দেখলে অনেকে মোটর সাইকেল নিয়ে বিকল্প ফাঁড়ি রাস্তায় চলে যান। এ কারণে অনেক সময় মোটর সাইকেল চালককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা কঠিন হয়। প্রকৃত পক্ষে সড়ক দুর্ঘটনার হার হ্রাস করতে হলে মোটর সাইকেল ব্যবহারে মানতে হবে সঠিক দিক নির্দেশনা। মোটর সাইকেল অপেক্ষাকৃত অনিরাপদ বাহন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই এর দুর্ঘটনা এড়াতে আইনিভাবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে যে আইন করা হয়েছে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশ তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। অনেক সময় বড় যানবাহনের সঙ্গে মোটর সাইকেল চলাচলে দুর্ঘটনা বেশি হয় তাই মোটর সাইকেলের জন্য আলাদা লেনের সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা। যে জায়গায় দুর্ঘটনা বেশি হয় সে জায়গাগুলো চিহ্নিত করে অতিরিক্ত সর্তকতা নিশ্চিত করা। বাসসহ অন্য পরিবহণে যাত্রীদের জন্য নিরাপত্তা এবং অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করে মোটর সাইকেল ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা এতে সড়কে মোটর সাইকেলের সংখ্যা কমবে একইসঙ্গে কমবে সড়ক দুর্ঘটনা।
এছাড়াও, মোটর সাইকেল চালকদেরই বুঝতে হবে যে ট্রাফিক আইনের সব বিধান মেনে সতর্কতার সঙ্গে মোটরসাইকেল না চালালে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই দুর্ঘটনার প্রথম শিকার নিজেকেই হতে হয়। তাতে মৃত্যু ঘটতে পারে, সৌভাগ্যক্রমে তা না ঘটলে এমন অঙ্গহানির আশঙ্কা থাকে, যাতে সারা জীবনের জন্য কর্মক্ষমতা হারাতে হতে পারে।
তাছাড়াও, মোটর সাইকেল চালকদের ট্রাফিক আইন মেনে চলা নিশ্চিত করতে ট্রাফিক পুলিশকে তৎপর হতে হবে। লাইসেন্সহীন ও ত্রুটিপূর্ণ মোটর সাইকেল চালানো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। মোটর সাইকেলের চালক ও অন্য আরোহীকে অবশ্যই হেলমেট পরতে হবে; ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কেউ মোটরসাইকেল নিয়ে সড়কে বেরোতে পারবেন না—এটা নিশ্চিত করা দরকার; ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়াটিও যথাযথ হওয়া দরকার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বেপরোয়াভাবে মোটর সাইকেল চালানো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা।
সর্বোপরি, সড়ককে আর মৃত্যু কূপে পরিণত না করতে সবাই সড়ক চলাচলে সঠিক নিয়ম মেনে চলতে হবে। সড়কে অপ্রত্যাশিত প্রাণ হারানো কারো কাম্য নয়।
Leave a Reply