বাংলাদেশ পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক থেকে পদোন্নতি পেয়ে ‘সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি)’ হয়েছেন জকিগঞ্জ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ জামশেদ আলম। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখার উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ পদোন্নতির আদেশ জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে ৩৩ জন নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শককে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তন্মধ্যে ২৭নং ক্রমিকে সিলেট জেলার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোঃ জামশেদ আলম (বিপি-৬৭৯৪০৯৭০৯৫) রয়েছেন। গত বুধবার (২২ অক্টোবর) সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান তাকে র্যাঙ্ক ব্যাজ পড়িয়ে দিয়েছেন।
জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই থানার বুজুর্গ উমেদ নগর গ্রামের মরহুম তাজুল ইসলাম ও মরহুম হাবিয়া খাতুনের সন্তান মোঃ জামশেদ আলম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হইতে ১৯৯২ সালে অর্থনীতিতে মাস্টার্স পাশ করে সরাসরি এস আই পদে পুলিশ বিভাগে যোগদান করেন। মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহন শেষে সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারা বাজার থানায় শিক্ষানবিস এস আই হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেই থেকে তিনি সুনামগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন থানায় সুনাম-এর সহিত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১০ পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সদস্য হিসাবে পুর্ব তিমুর এ দায়িত্ব পালন করে শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। মিশন থেকে ফিরে এসে তিনি পুলিশ পরিদর্শক হিসাবে পদোন্নতি পান। পুলিশ পরিদর্শক হিসাবেও তিনি দীর্ঘদিন সিলেট অঞ্চলে বিভিন্ন ইউনিটে কাজ করেন। তিনি ২০১৪-২০১৫ সালে সিলেট জেলার জকিগঞ্জ থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসাবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি সিলেট জেলার সদর কোর্টের কোর্ট ইন্সপেক্টর হিসাবে অত্যন্ত দক্ষতার সহিত দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় গত ২১ অক্টোবর পুলিশ পরিদর্শক হতে সহকারী পুলিশ সুপার হিসাবে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি একজন জনবান্ধব মানবিক পুলিশ অফিসার ছিলেন। তাঁর পদোন্নতিতে সিলেট-এর মানুষ বেশ আনন্দিত। ইতিমধ্যে তাকে অনেকেই অভিনন্দন জানিয়ে সংবর্ধনা প্রদান করেছেন।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) রাতে সিলেট নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে তাকে ঘিরে আয়োজন করা হয় এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। দৈনিক যুগান্তর-এর সিলেট ব্যুরো প্রধান সংগ্রাম সিংহের সভাপতিত্বে ও দৈনিক সংবাদ-এর বিশেষ প্রতিনিধি আকাশ চৌধুরীর সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সিলেট মহানগর বিএনপির সহসভাপতি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি সুদীপ সেন বাপ্পু। তিনি বলেন, “আমরা আজ কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে নয়, একজন মানবিক ও গুণী মানুষকে সম্মান জানাচ্ছি। ছাত্রজীবন থেকেই জামশেদ আলম লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত, আর কর্মজীবনে তিনি থেকেছেন সাধারণ মানুষের পাশে।”
সংবর্ধনার জবাবে জামশেদ আলম বলেন, “সিলেটেই আমার কর্মজীবনের সূচনা। এখানকার মানুষের ভালোবাসায় আমি অভিভূত। মনে হয়, কর্মক্ষেত্রে সিলেট আমার দ্বিতীয় জন্মভূমি। দেশে-বিদেশে, বিশেষ করে লন্ডনে সিলেটিরা আমাকে যে সম্মান দিয়েছে, তা আজীবনের প্রেরণা হয়ে থাকবে। বন্ধু মহলের এই সংবর্ধনা আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক নূরে আলম খোকন, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক জহিরুল ইসলাম, দৈনিক সমবানী সম্পাদক এম. এ. অন্তর হাওলাদার, এনটিভির ক্যামেরাপার্সন আনিস রহমান, বাউল শিল্পী বিরহী কালা মিয়া, ডেইলি স্টার-এর ফটোগ্রাফার শেখ আশরাফুল আলম নাসির, বৈশাখী টিভি-এর প্রতিনিধি এস. সুটন সিংহ, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি এস. আলমগীর, আরটিভির প্রতিনিধি হাসান মোহাম্মদ শামীম প্রমুখ।সাহিত্য ও সাংবাদিকতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে জামশেদ আলমের। ছাত্রজীবনে তিনি কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতেন এবং দৈনিক আজাদী পত্রিকায় কলম সৈনিক হিসেবে কাজ করেন। পুলিশ বিভাগে যোগদানের পরও লেখালেখি থেমে থাকেনি তাঁর। এ কারণে সিলেটের সাংবাদিক মহলের নিকট বেশ জনপ্রিয় এক ব্যক্তি সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ জামশেদ আলম।
Leave a Reply