জকিগঞ্জে এক মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাকে পুলিশী হয়রানীর খবর পেয়ে এই পরিবারের পাঁশে দাঁড়িয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও একাত্তরের রণাঙ্গনের বীরমুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। তিনি বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় পুলিশী হয়রানির শিকার জকিগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ বাজার এলাকার বাসিন্দা বয়োবৃদ্ধ যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী কানন ব্রত পাল ও তাঁর পরিবারকে শান্তনা দিতে আসেন। এ সময় একদল মুক্তিযোদ্ধা সহ রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ ছাড়াও কালিগঞ্জ বাজারের বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
হয়রানির শিকার সুমন মিষ্টান্ন ভান্ডর-এর স্বত্বাধিকারী ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সাজন কুমার পাল সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদকে বলেন, তাঁর পিতা যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কানন ব্রত পালের বসত বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গত ২২ নভেম্বর ২০২২ ইংরেজী তারিখে জকিগঞ্জ থানার একদল পুলিশ তল্লাশির নামে বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বসত বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তছনছ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হুমকি-ধমকি দেয়। ঘটনার সময় তাঁর পিতা নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পরও দাম্ভিকতা দেখিয়ে তাঁকে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মানসিক নির্যাতন করা হয়। এসময় বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কানন ব্রত পাল প্রথমে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে জ্ঞান ফিরলেও এ পর্যন্ত তিনি নির্বাক রয়েছেন। তাছাড়া তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুমন মিষ্টান্ন ভান্ডর থেকে ৩০ বস্তা চিনি জোরপূর্বক থানায় নিয়ে যান এবং সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত দৃশ্য জোরপূর্বক ডিলিট করে যান। সিলেট শহর থেকে বৈধ কাগজপত্রসহ ক্রয় করার ডকুমেন্ট থাকলেও এসব চিনি নাকি ভারতীয় বলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ বাদী হয়ে একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা রেকর্ড করেন। রাতে দালাল মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাজন কুমার পালকে চিনি ফেরত দেয়ার কথা বলে থানায় নিয়ে মামলায় জড়ানোর হুমকি ধমকি দিয়ে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য করে পুলিশ। পুলিশের হুমকি ধমকিতে ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে এতদিন তারা মূখ খোলেনি। সম্প্রতি পুলিশের পক্ষ থেকে আরও টাকা দাবী করা হয়। না দিলে মামলার চার্জশীটে ঢুকানোর হুমকি দিলে সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে তাঁর বড় ভাই বিপ্লব কুমার পাল বুধবার একটি স্মারকলিপি সিলেটের পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট মহলের নিকট দায়ের করেছেন।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ-এর সাবেক চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদসহ স্থানীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা হয়রানির শিকার মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সাজন কুমার পাল-এর বিস্তারিত বিবরণ মনযোগ দিয়ে শুনেন। পরবর্তীতে সাজন কুমার পালের বড় ভাই বিপ্লব কুমার পালের বক্তব্য শুনেন এবং স্থানীয় কালিগঞ্জ বাজারের বেশ ক’জন ব্যবসায়ীরও বক্তব্য শুনেন।
পরে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ঘটনার স্বাক্ষী প্রমাণ সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়ে বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আপনারা ধৈর্য ধরুন। ন্যায় বিচার পাবেন। তখন শত শত লোকে এলাকা লোকারণ্য হয়ে গেলে উৎসুক জনতাকেও শান্তনা দিয়ে আসেন মাসুক উদ্দিন আহমদ।
এদিকে পুলিশের বিরুদ্ধে সিলেটের পুলিশ সুপার বরাবর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান বিপ্লব কুমার পালের দায়েরকৃত অভিযোগ পেয়েই তদন্তে নেমেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারী) সিলেটের পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুফিয়ান আহমদ ও জকিগঞ্জ-বিয়ানীবাজার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির আহমদের সমন্বয়ে একটি টিম সরেজমিন তদন্ত করেছে।
পুলিশের তদন্ত টিম ঘটনাস্থল কালিগঞ্জ বাজারের সুমন মিষ্টান্ন ভান্ডার ও তার বসত ঘরে গিয়ে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ শুনেন। তদন্ত টিমের সাথে কথা বলেন, মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও ছেলেরা। তারা পুলিশী হয়রানির স্বাক্ষ্য প্রমাণ দেন।
অপরদিকে ওইদিন সন্ধ্যায় ন্যাক্কার জনক এই ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল কালিগঞ্জ বাজারে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে পুলিশের হয়রানির শিকার বয়োবৃদ্ধ যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী কানন ব্রত পালের ছেলে বিপ্লব কুমার পাল ও সাজন কুমার পাল সহ স্থানীয়রা ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন।
Leave a Reply