সিলেটের জকিগঞ্জে স্ত্রীর করা যৌতুক ও নির্যাতন মামলার আসামি আলকাছ উদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ।
শুক্রবার রাতে জকিগঞ্জ থানা পুলিশের একাধিক টিম অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করতে সক্ষম হয়। পরে শনিবার দুপুরে জকিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজেস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মাস পূর্বে জকিগঞ্জ উপজেলার ৭নং বারঠাকুরী ইউনিয়নের উত্তরবাগ গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে আলকাছ উদ্দিন (৩২)-এর সাথে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক জকিগঞ্জ উপজেলার ৬নং সুলতানপুর ইউনিয়নের গঙ্গাজল গ্রামের মৃত মকদ্দছ আলীর মেয়ে রিমা আক্তার (২৭)-এর সাথে বিবাহ হয়। বিবাহের পর থেকেই স্ত্রী রিমা আক্তারের কাছে যৌতুক দাবী করে আসছিল আলকাছ উদ্দিন। যৌতুকের টাকা না পেয়ে মাঝে মধ্যে রিমা আক্তারের উপর চালাতো শারীরিক ও মানসিক নিযার্তন। নিযার্তনের সহযোগীতা করতো আলকাছ উদ্দিন-এর বড় ভাই জয়নাল আবেদীন। এই নিয়ে রিমা আক্তার ও আলকাছ উদ্দিন-এর দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকতো।
গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) রাত অনুমান ৯ ঘটিকার সময় রিমা আক্তারের স্বামী যৌতুকের টাকা চাইলে রিমা আক্তার স্বামীর কথা অপারগতা প্রকাশ করলে স্বামী আলকাছ উদ্দিন তার স্ত্রী’র চুলের মুষ্ঠিতে ধরে মাটিতে ফেলে এলোপাথারি বাঁশের লাঠি দিয়ে মারপিট করে উভয় হাতের বাহুতে কুনুই-এর নিচে উভয় পায়ের উরুতে, নিচ পেটে, পিটে, নিতম্বে, ফুলাচেছা, ফাটা রক্তাক্ত জখম করে। রিমা আক্তার কান্নাকাটি শোর-চিৎকার করলে রিমা আক্তারের স্বামীর বড় ভাই জয়নাল আবেদীন বলে শালীর বেটিকে চুল কাটিয়া বের করে দেও বলিয়া কাঁচি নিয়া আসিয়া রিমা আক্তারের মাথার লম্বা চুল কাটিয়া ফেলে এবং এলোপাথারি কিল, ঘুষি মারিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলাচেছা জখম করে। বিবাদী ভয়ে আত্মরক্ষার জন্য দৌড়ে পালিয়ে পুকরা গ্রামের মোঃ জাকির হোসেন-এর বাড়ীতে গিয়ে আত্মরক্ষা করে। পরবর্তী জাকির হোসেন জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ কল দিয়ে উক্ত ঘটনার সংবাদ প্রদান করেন এবং রিমা আক্তারের অভিভাবককে তাহার বাড়ীতে আসতে বলেন। ৯৯৯ এর সংবাদ পেয়ে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রিমা আক্তারকে উদ্ধার করেন এবং রিমা আক্তার-কে তার মায়ের জিম্মায় দিয়ে চিকিৎসার জন্য দ্রুত জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রেরণ করেন।
এ ঘটনায় রিমা আক্তার বাদী হয়ে জকিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করলে তাৎক্ষনিক অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোশাররফ হোসেন জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসাইন ও সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুনকে অবহিত করলে সিলেট জেলার পুলিশ সুপার দ্রুত মামলা এফআইআর করে আসামী গ্রেফতারের নির্দেশ প্রদান করেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশ পেয়ে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক নারী ও শিশু নিযার্তন দমন আইন ২০০০ (সং/০৩) এর ১১ (ক)/৩০ ধারায় মামলাটি রেকর্ড করেন। জকিগঞ্জ থানার মামলা নং-১৩, তাং-১২/০৫/২০২২খ্রিস্টাব্দ।
পরে জকিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোশাররফ হোসেন-এর সার্বিক দিক নির্দেশনায় জকিগঞ্জ থানা পুলিশের একাধিক টিম অভিযান পরিচালনা করে মামলা রেকর্ড হওয়ার ৩ ঘন্টার মধ্যেই অমানবিক নারী নিযার্তনের স্বীকার রিমা আক্তারের স্বামী অভিযুক্ত আলকাছ উদ্দিনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জকিগঞ্জ থানার মিডিয়া অফিসার মফিদুল হক সজল বলেন, অভিযুক্ত আলকাছ উদ্দিনকে বিধি মোতাবেক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply