প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিতে হয় মানুষকে। তবে শরীরের মৃত্যু হলেও কেউ কেউ বেঁচে থাকেন কর্মের গুণে। তেমনই এক কীর্তিমান আলেম আরব আমিরাতের বিচার বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা ও জকিগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ইছামতি দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ শাইখুল হাদিস আল্লামা হবিবুর রহমান। দেশ, জাতি ও ধর্মের প্রতি নিবেদিত প্রাণ এই ব্যক্তিত্ব নিজের পরিপূর্ণ জীবনে দ্বীন, ধর্ম ও জাতি গঠনে নিয়োজিত ছিলেন। অংশ নিয়েছিলেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন সংগঠনে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। অন্যদিকে প্রায় অর্ধশতাব্দি ইলমে হাদীসের খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত রেখে পরিণত হয়েছিলেন ধর্মীয় জাতি গঠনের অনন্য এক বাতিঘর।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জকিগঞ্জে লাখো মানুষের ভালোবাসায় চিরবিদায় জানানো হয় এই বরেণ্যজনকে। জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাইগ্রামস্থ নিজ বাঁড়ির পার্শ্ববর্তী থানাবাজার সংলগ্ন বিশাল ক্ষেতের মাঠে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।জানাজার নামাজে ইমামতি করেন আল্লামা হবিবুর রহমান মুহাদ্দিস ছাহেবের বড় ছেলে লন্ডনস্থ দারুল হাদীসের উস্তাদ মাওলানা আব্দুল আউয়াল হেলাল।
স্মরণকালের বৃহৎ এ জানাজায় দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম, রাজনীতিক নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক ও সাংবাদিক সহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশ নেন। এ সময় দেশবরেণ্য আলেম আল্লামা হবিবুর রহমান ছাহেবের ভক্ত, অনুসারী, শিক্ষার্থীসহ জানাজায় আসা ধর্মপ্রাণ মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন। জানাজার নামাজের আগে আল্লামা হবিবুর রহমান ছাহেবের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর কেন্দ্রীয় সভাপতি আল্লামা হুসামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা একেএম মনোওর আলী, সৎপুর কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা শফিকুর রহমান, ভারতের রফিনগরের সায়্যিদ হিফজুর রাহমান মিশকাত, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডীন ড. রইছ উদ্দিন, অধ্যক্ষ কবি কালাম আজাদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. সৈয়দ শাহ এমরান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরীসহ আলেম উলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
জানাজা পূর্ব মূল্যায়নে বক্তারা বলেন, বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন প্রজন্মের পর প্রজন্মে। বেঁচে থাকবেন কর্মগুণে। সেই কর্মগুণেই জাতির যে কোন সঙ্কটে তিনি পথ দেখাতেন।
এ সময় আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলা ফুলতলী, সাবেক এমপি আলহাজ্ব সেলিম উদ্দিন, জকিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব লোকমান উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাব্বীর আহমদ, ইকবাল আহমদ, কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরী, মাওলানা শিহাব উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, মাওলানা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, মাওলানা নজমুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, অধ্যক্ষ মাওলানা কমরুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, হাফেজ মাওলানা ফখরুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী ও জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুস সবুর সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় থানাবাজার সংলগ্ন মাঠে জানাজা শেষে বিকাল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে নিজের প্রতিষ্ঠিত রারাই গ্রামস্থ আল-হাবীব জামে মসজিদের উত্তর পাঁশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মুহাদ্দিস ছাহেব বার্ধক্যজনিত কারণে অনেকদিন ধরে শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ১৮ মিনিটের দিকে তিনি নিজ বাড়ীতে ইন্তেকাল করেন। তার ৪ ছেলে ৩ মেয়েসহ অসংখ্য ভক্ত, অনুসারী, মুরিদীন, শিক্ষার্থী ও শুভাকাংখী রয়েছেন।
Leave a Reply