আজ ২১ নভেম্বর। সিলেটের জকিগঞ্জ মুক্ত দিবস। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দাবী দেশের প্রথম মুক্তাঞ্চল দিবসও আজ। দিবসটি উপলক্ষে জকিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও জকিগঞ্জ প্রেসক্লাব নানা কর্মসূচি পালন করবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, দোয়া মাহফিল, র্যালী, আলোচনা সভা ও সাংস্কুতিক অনুষ্ঠান।
সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা আকরাম আলী জানান, দেশব্যাপী যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে সিলেটের সীমান্ত উপজেলা জকিগঞ্জকে শত্রু মুক্ত করার শপথ নেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। সে মতে ১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর রাতে যৌথ বাহিনীর এক সাঁড়াশি অভিযানের ফলে ২১ নভেম্বর ভোরে মুক্ত হয় জকিগঞ্জ। মুক্তিযুদ্ধে জকিগঞ্জ ছিল ৪ নং সেক্টরের অন্তর্ভূক্ত। অধিনায়ক ছিলেন মেজর চিত্ত রঞ্জন দত্ত।
তিনি আরও জানান, ২৭ মার্চ জকিগঞ্জ ডাক বাংলোয় এক গোপন বৈঠকে থানার সকল ইপিআর ক্যাম্পের পাক সেনাদের খতমের সিদ্ধান্ত হয়। ২৮ মার্চ বীর মুক্তিযোদ্ধা মেকাই মিয়া, চুনু মিয়া, আসাইদ আলী, ওয়াতির মিয়া, তজমিল আলী, মশুর আলী, হাবিলদার খুরশিদ, করনিক আবদুল ওয়াহাব, সিগনালম্যান আবদুল মোতালেব প্রমুখ প্রথমে জকিগঞ্জ ও মানিকপুর ইপিআর ক্যাম্পে অপারেশন চালিয়ে পাক সেনাদের খতম করে জকিগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন।
এমপি মরহুম দেওয়ান ফরিদ গাজী, এমএলএ মরহুম আবদুল লতিফ, এমএলএ আবদুর রহিম, সেক্টর কমান্ডার চিত্ত রঞ্জন দত্ত, মিত্র বাহিনীর দায়িত্ব প্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার ওয়াটকে, কর্নেল বাগচি সহ মাছিমপুর ক্যান্টলম্যান্টে জকিগঞ্জকে স্বাধীন করার এক পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। ঐ পরিকল্পনা ছিল কীভাবে কুশিয়ারার ওপারে ভারতের করিমগঞ্জের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে জকিগঞ্জ দখল করা যায় এবং এ পরিকল্পনা মতই জকিগঞ্জ মুক্ত হয়।
উপজেলার একাধিক মুক্তিযোদ্ধা জানান, সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জকে মুক্ত করার পরিকল্পনা অনুসারে ২০ নভেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী ৩টি দলে বিভক্ত হয়ে প্রথম দল লোহার মহলের দিকে ও দ্বিতীয় দল আমলশীদের দিকে অগ্রসর হয়। মূল দল জকিগঞ্জের কাষ্টমঘাট বরাবর করিমগঞ্জ কাষ্টম ঘাটে অবস্থান নেয়। প্রথম ও দ্বিতীয় দল নিজ নিজ অবস্থান থেকে কুশিয়ারা নদী অতিক্রম করে জকিগঞ্জের দিকে অগ্রসর হয়। পাক বাহিনী খবর পেয়ে দিকবিধিক ছুটোছুটি শুরু করে। মুক্তিবাহিনী তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে ভেবে তারা আটগ্রাম-জকিগঞ্জ সড়ক দিয়ে পালাতে থাকে। ইতোমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় দল জকিগঞ্জ পৌছে যায়। মুল দল কুশিয়ারা নদীতে রাবারের বালিশ দিয়ে সেতু তৈরী করে জকিগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে। তখন পাক সেনাদের বুলেটে শহীদ হন ভারতীয় বাহিনীর মেজর চমন লাল ও তার দুই সহযোগী। এ সময় কয়েকজন পাক সেনাকে আটক করা হয়। এভাবেই মুক্ত হয় জকিগঞ্জ। একুশে নভেম্বর ভোরে জকিগঞ্জের মাটিতেই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়িয়ে দেন মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক আটকৃত বন্দীদের জকিগঞ্জ থানা থেকে মুক্ত করা হয়।
এদিকে স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি জকিগঞ্জ উপজেলাকে দেশের প্রথম মুক্তাঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবী জানিয়ে আসছেন এতদাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা সহ সকল নাগরিকবৃন্দ। এ দাবি বাস্তবায়নে বিগত বছরগুলোতে দেশে এবং প্রবাসে অনেক কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই স্বীকৃতি পায়নি জকিগঞ্জবাসী। এ দাবিতে এবারও দেশে এবং বিদেশে নানা কর্মসূচি পালিত হবে।
Leave a Reply